বিশ্বকাপে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৪০২ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য দিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। ফখর জামানের রেকর্ড সেঞ্চুরির পর বৃষ্টি আইনে ২১ রানের জয় পেয়েছে পাকিস্তান। এই জয়ে সেমির আশা টিকে রইলো বাবর আজমের দলের। ৮ ম্যাচে চার জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে পাকিস্তান। সমান পয়ন্টে নিয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে চার নম্বরে রয়েছে কিউইরা।
এর আগে রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরি এবং উইলিয়ামসনের ৯৫ রানের ওপর ভর করে ৪০১ রানের পাহাড় গেড় নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে দলীয় ৬ রানেই উইকেট হারায় পাকিস্তান। ব্যক্তিগত ৪ রানে টিম সাউদির বলে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। এরপরই শুরু হয় ম্যাচের নতুন গল্প। পাক অধিনায়ক বাবর আজমকে সাথে নিয়ে ঝড় তোলেন ওপেনার ফখর জামান।
প্রথম ১০ ওভারে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৬ রান তোলে পাকিস্তান। ১৪ দশমিক ৪ ওভারেই দলীয় একশো রান ছাড়ায় পাকিস্তান। ওপেনার ফখর মাত্র ৩৯ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। এরপরই যেন আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন এই ব্যাটার। পরের ৫০ রান পূর্ণ করতে খেলেন মাত্র ২৪ বল। অর্থাৎ ৬৩ বলেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। এর মাধ্যমে পাকিস্তানিদের মধ্যে বিশ্বকাপের দ্রুত শতকের রেকর্ড নিজের নামে লেখান এই পাক ওপেনার। সেঞ্চুরি করার পথে তিনি ৯টি ছক্কা মারেন। ২০ ওভারেই আগেই দেড়শো ছাড়ায় পাকিস্তান। আর ইনিংসের ১৯ দশমিক ২ বলের সময়ই নিজের সেঞ্চুরির দেখা পান ফখর। অন্যদিকে দারুণভাবে তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন অধিনায়ক বাবর।
ইনিংসের ২১ দশমিক ৩ ওভারের সময় ম্যাচে বৃষ্টি হানা দেয়। দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। এতে কমে আসে ইনিংসের দৈর্ঘ। পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪১ ওভারে ৩৪২ রানের। বৃষ্টির পর আবার খেলা শুরু হয়। তবে ইনিংসের ২৫ দশমিক ৩ ওভারের সময় আবার হানা দেয় বৃষ্টি। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও বৃষ্টি না থামায় শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আইনে খেলা নিষ্পত্তি করেন ম্যাচ অফিশিয়ালরা। খেলা বন্ধ হওয়ার আগে পাকিস্তান এক উইকেট হারিয়ে তোলে ২০০ রান। এতে ডিএল মেথডে ২১ রানে জয় পায় পাকিস্তান।
ম্যাচে ফখর ও বাবর আজম ১৪১ বলে ১৯৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। ফখর ৮১ বলে ১২৬ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। ইনিংসটি খেলতে তিনি ১১টি ছক্কা হাঁকান। তার ইনিংসে চারের মার ছিল ৮টি। অপরপাশে অধিনায়ক বাবর শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৬৩ বলে ৬৬ রানে। তিনি এই ইনিংস খেলার পথে ৬টি চার ও দুইটি ছয় মারেন। এমন দুর্দান্ত ইনিংস খেলার সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে ফখর জামানের হাতেই।
এর আগে, বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করে নিউজিল্যান্ড। পাওয়ারপ্লে’তে কোন উইকেট না হারিয়ে ৬৬ রান তোলে তারা। তবে ইনিংসের এগারোতম ওভারে খেই হারান ডেভন কনওয়ে। ৩৯ বলে ৩৫ রান করে হাসান আলীর বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এরপরই পাল্টায় ম্যাচের দৃশ্যপট। ইনজুরি কাটিয়ে এ ম্যাচের একাদশে ফেরেন কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। রবীন্দ্র-কেইন জুটিতেই মূলত পাকিস্তানের বিপক্ষে রান উৎসবে মাতে নিউজিল্যান্ড। ১৪২ বলে এই জুটিতে আসে ১৮০ রান। উইলিয়ামসনের সামনে সুযোগ ছিল সেঞ্চুরির মাধ্যমে ক্যামব্যাককে রাঙানো। তবে ব্যক্তিগত ৯৫ রানে পাক অলরাউন্ডার ইফতিখারের বলে ফখর জামানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কিউই অধিনায়ক। এই রান তুলতে তিনি খেলেন মাত্র ৭৯ বল। ১০টি চার ও ২ ছয়ে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি।
উইলিয়ামসন ফিরে গেলেও তার আগেই সেঞ্চুরি তুলে নেন রাচীন রবীন্দ্র। মাত্র ৮৮ বলেই তিনি তিন অঙ্কে পৌঁছে যান। শেষ পর্যন্ত ৯৪ বলে ১০৮ রান করে ওয়াসিম জুনিয়রের শিকার হয়ে ফেরেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই কিউই ব্যাটার। ইনিংসটি খেলার পথে তিনি ১৫টি চার এবং একটি ছক্কা মারেন।
এই দুই ব্যাটার ফেরার পর কিউই অন্য ব্যাটাররা বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে পরের ব্যাটারদের মাঝারি ইনিংসে ভর করে কিউইরা ৬ উইকেট হারিয়ে থামে ৪০১ রানে। যেটি এই আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মিচেল ২৯ রান, চাপম্যান ৩৯ এবং ফিলিপস খেলেন ৪১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। মিচেল স্যান্টনার অপরাজিত থাকেন ২৬ রান। এই ম্যাচের খরুচে ছিলেন পাকিস্তানি বোলাররা। শাহিন শাহ আফ্রিদি ১০ ওভারে ৯০ রান খরচ করলেও কোনো উইকেট নিতে পারেননি এই ম্যাচে। হারিস রউফ ৮৫ এবং হাসান আলী ৮২ রান খরচায় একটি করে উইকেট শিকার করেছিলেন। তবে ওয়াসিম কিছুটা সফল ছিলেন। এই পাকিস্তানি পেসার ১০ ওভারে ৬০ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
মন্তব্য করুনঃ