• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ দুপুর ০১:১৮:৫৭ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

বাংলাদেশের গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন, প্রশ্ন ইইউ'র প্রতিনিধি দলের

চ্যানেল এস ডেস্ক: বাংলাদেশের গণমাধ্যম কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করেছে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল। জবাবে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা জানান, দেশে নানা ইস্যুতে বিভেদ থাকলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে সাংবাদিকরা একমত। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানান, এ আইনটি সংশোধনের কথা জানিয়েছে সরকার। সোমবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে ইইউ দূতাবাসে কয়েকজন সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করে ইইউ প্রতিনিধি দল। বৈঠকে উপস্থিত সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সবারই উদ্বেগ আছে বলে ইইউ প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যম ভূমিকা রাখবে বলেওতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিতে ইইউ প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আসতে হচ্ছে, বিষয়টি দুঃখজনক। তবে তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি ফিরে গিয়ে তারা যেন এমন রিপোর্ট না দেন, যা বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যাশা করে না। সাংবাদিক প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ ও প্রথম আলোর ইংরেজি সংস্করণের সম্পাদক আয়শা সিদ্দিক। পরে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাবের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে। এ ছাড়া ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিরা নির্বাচনে জোটের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইইউ বেশি করে পর্যবেক্ষক পাঠালে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। অনিয়ম-বিশৃঙ্খলাও কম হবে। ধারাবাহিক বৈঠককালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা নিজ নিজ সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘাতে তারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলো দূরে হওয়ায় ভোটদানে সমস্যায় পড়তে হয়। তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিরা বলেন, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি ও ভোটদানে তাদের তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা বলেন, নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে হুইলচেয়ার ব্যবহারের সুযোগ নেই। এ জন্য ভোট দিতে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাদের বক্তব্য ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মন দিয়ে শোনেন। নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফরে রয়েছে ইইউর ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি মূল্যায়নের প্রাক- মিশনে ৯ জুলাই থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে রুটিন বৈঠক দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে দলটি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ইইউর পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেলের কাছে মূল্যায়ন ও মতামত জমা দেবে বিশেষজ্ঞ দলটি। তাদের মতামত ইতিবাচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে ইইউ। পৃথক বৈঠকে উপস্থিত ইন্ডিজেনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের (আইপিডিসি) সভাপতি সঞ্জীব দ্রং বলেন, প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা হয়েছে। এবারও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো মতৈক্য হয়নি। শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, এর বাইরে অন্যান্য পর্যায়ের ও উপনির্বাচনের সময়ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, হুমকি দেওয়া হচ্ছে, নানাভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। হতাহতের শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সরকার কখনও কখনও ব্যবস্থা নিলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা যথাযথ নয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে সংঘাত ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে হয়, সবাই সেটা প্রত্যাশা করেন। এ ক্ষেত্রে ইইউ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়, উন্নয়ন সংগঠন এএলআরডির উপনির্বাহী রওশন জাহান ও বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি আব্দুর সাত্তার। সভায় ইইউ প্রতিনিধি দলকে বলা হয়, এরই মধ্যে এক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচন প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে। অন্য দল নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে সংঘাত, সহিংসতার আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুরা যাতে অতীতের মতো সংঘাতের শিকার না হন, সেটা গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। নির্বাচনের সময় ইইউ যাতে বেশি সংখ্যক পর্যবেক্ষক পাঠায়, সে অনুরোধ করা হয়।সূত্র: দৈনিক সমকাল

-->