• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ১১:৩৬:৪২ (02-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

কারখানা বন্ধ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় মালিকেরা


শুক্রবার ১০ই নভেম্বর ২০২৩ দুপুর ১২:৩৯



কারখানা বন্ধ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় মালিকেরা

ছবি: সংগৃহীত

চ্যানেল এস ডেস্ক: 

আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে কারখানা বন্ধ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চান তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। এ ছাড়া তাঁরা কারখানায় হামলার ঘটনায় মামলা করেও শ্রমিকদের চাপে রাখতে চান।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরায় নিজেদের কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গতকাল গাজীপুরে ২২টি কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেয় মালিকপক্ষ।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা বিজিএমইএর একজন নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে কারখানাগুলোতে আপাতত নতুন শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ থাকবে, হামলা-ভাঙচুরের শিকার কারখানাগুলো মামলা করবে, শ্রমিকেরা কাজ না করলে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় (কাজ নেই, মজুরি নেই) কারখানা বন্ধ, আইন অনুযায়ী গত মাসের মজুরি প্রদান এবং হামলা ও ভাঙচুরের শিকার কারখানায় ছবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা।

ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্ত হওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করে দুই দিন ধরে আন্দোলন করছে পোশাকশ্রমিকদের একটি অংশ। মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। গত পরশু শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন নামের এক শ্রমিক নিহত হন।

নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় গত মঙ্গলবার পোশাকশ্রমিকের মজুরিকাঠামোর খসড়া চূড়ান্ত হয়। ওই দিন বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান জানান, পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরিকাঠামো বাস্তবায়িত হবে।

মালিকদের ভাবনা

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর একাধিক নেতা জানান, মজুরি নিয়ে শ্রমিকেরা দুই ভাগ হয়ে গেছেন। তাঁদের একটি পক্ষ মজুরি মেনে নিয়েছে। অন্য পক্ষ মানেনি। মালিকেরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কারখানার মালিক গতকাল বলেন, ‘আমাদের ধারণার চেয়ে মজুরি কিছুটা কম বেড়েছে। কিছু কারখানা ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা হলেও দিতে পারবে না। ফলে সেসব কারখানার অজুহাত দেখানো অযৌক্তিক। শ্রমিকেরা ভালো না থাকলে মালিকেরাও ভালো থাকবেন না। দক্ষতার সঙ্গে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করলে লোকসানের সুযোগ নেই।

আন্দোলনরত শ্রমিকদের শান্ত করতে মালিকপক্ষ কী কৌশল নিয়েছে, সে বিষয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতীতেও ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত হওয়ার পর কয়েক দিন শ্রমিক আন্দোলন চলে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান এবং মামলা ও কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত কাজে দিয়েছে। এবারও সেই পথে হাঁটছে মালিকপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর একজন পরিচালক বলেন, ‘শ্রমিকদের আন্দোলন যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে মজুরি পুনর্বিবেচনা ছাড়া পথ থাকবে না। কারণ, বহির্বিশ্বে আমাদের শিল্প সম্পর্কে খারাপ বার্তা যাচ্ছে।’

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান গতকাল বলেন, ‘অনেকেই শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে। বর্তমান মজুরিকাঠামো বাস্তবায়ন হলেই তো অনেকে চাকরি হারাবে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তা সবাই স্বীকার করছে। তবে রাতারাতি তো সবটা বাড়ানো সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে।’ মজুরির বিষয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না। তবে সরকার যদি ১ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমাদের মানতে হবে, তাতে কারখানা বন্ধ হলে হবে। কারখানা বন্ধ হলে অবশ্য কেউ দেখে না।’

প্রস্তাব দেবে আইবিসি

পোশাকশ্রমিকদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে মাসে ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরি প্রয়োজন বলে মনে করে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন (সিসিসি)। ইউরোপভিত্তিক এই শ্রমিক অধিকার জোট গত বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, শ্রমিকেরা অতিরিক্ত কাজের মজুরির (ওভারটাইম) ওপর নির্ভর করে সংসার চালাচ্ছেন।

সেই সঙ্গে ঋণ করে বা এক বেলা না খেয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে তাঁদের। শ্রমিকদের মজুরি দারিদ্র্যসীমার নিচে হওয়ায় তাঁরা কখনো কখনো সন্তানদের কাজে যেতে বাধ্য করেন। তারা মনে করে, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটা আবার হয়েছে শ্রমিকদের টানা আন্দোলন-সংগ্রামের পর।

জানতে চাইলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সভাপতি আমিরুল হক বলেন, ‘আমরা আশা করছি, গতবারের মতো এবারও সরকারপ্রধানের হস্তক্ষেপে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে যাবে। আমরা আইবিসির পক্ষ থেকে কমপক্ষে আরও ১ হাজার টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবি করব। একই সঙ্গে মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন ৫৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করার প্রস্তাব করব।’

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ