চ্যানেল এস ডেস্ক :
গত ১১ বছরে শুধু মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন খরচ করেছে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। কীটনাশক কেনা ও প্রয়োগ, যন্ত্রপাতি আর বেতন-ভাতা বাবদ উত্তর সিটি খরচ করেছে ৫৮৬ কোটি ৫২ লাখ। আর ঢাকা সিটি দক্ষিণের খরচ ছিল ৪৯৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। দুই সিটি শুধু বেতন ভাতাতেই খরচ করেছে ৫১৪ কোটি টাকা। এতো এতো টাকা গেলো মশার পেটে, লাভটা কী হলো? বিশ্লেষকরা বলছেন, অবৈজ্ঞানিক সব প্রকল্পে শুধু অপচয় হয়েছে অর্থের। যদিও এ তাদের এ দাবি মানতে নারাজ দুই সিটি করপোরেশন।
মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে ১৮৯৭ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব মশা দিবস। ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ সময়ে বাংলাদেশও পালন করছে দিবসটি। আগেও করেছে, তবে কাজের কাজ হয়নি কিছুই। বরং দিনে দিনে বেড়েছে মশা। মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ নগরবাসীর আতঙ্কের কারণ। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, এতো বছর তাহলে কী করলো সিটি করপোরেশন?
রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণে গত ২৭ বছরে ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা খরচ করেছে সিটি করপোরেশন। ১১ বছর হলো ভাগ হয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ।
ঢাকা দক্ষিণ কীটনাশক ক্রয় ও প্রয়োগে খরচ করে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি আর বেতনভাতাসহ মোট গেছে ৪৯৩ কোটি ২৪ লাখ।
দক্ষিণ সিটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, এক টাকাও অপচয় হয়নি। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, টাকাগুলো স্বচ্ছভাবে খরচ করা হয়েছে। এবং টাকাগুলো অবশ্যই কাজে লেগেছে। আপনারা এশিয়ার অন্যান্য দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন যে, মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-ফিলিপাইনের মতো দেশের পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়েও অনেক অনেক বেশি খারাপ।
১১ বছরে উত্তর সিটি কীটনাশক কেনা আর প্রয়োগে খরচ করে ৩২২ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি আর বেতন-ভাতাসহ খরচ ৫৮৬ কোটি ৫২ লাখ।
এরইমধ্যে এডিসের লার্ভা ধ্বংসের নতুন কৌশল বিটিআই নিয়ে হয়েছে জালিয়াতি। যদিও সিটি করপোরেশনে দাবি, এতে কোনো টাকা খরচ হয়নি। আর ১১ বছর ওসব খরচ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।
ডিএনসিসি’র উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, রেজাল্ট ডেফিনেটলি ভালো এসেছে। রেজাল্ট ভাল না আসলে আপনারা মশার জন্য থাকতে পারতেন না। রেজাল্ট ভালো আসছে মানে কাজ ভালো হচ্ছে। আর কাজ হচ্ছে বলেই খরচ হচ্ছে।
জাতীয় ডেঙ্গু কমিটির সদস্য ছিলেন ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। তার মতে, অপচয় হয়েছে টাকা, উল্টো পেট ভরেছে মশার। বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি জানতে চাই যে এই টাকা দিয়ে হাঁস কেনা হয়েছে কতো টাকার? ব্যাংক কেনা হয়েছে কতো টাকার? আরও ফড়িং-টড়িং আরও কী কী যেনো কিনলো। এগুলো তো সম্পূর্ণ অপচয়। এটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে কারণ তারা বৈজ্ঞানিক উপায়ে কিছুই করছেন না। কারও কোনো কথাও তারা শুনছেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট বলছে: এতো এতো টাকার খরচ, কিন্তু ফলাফল শূন্য। পকেট কেটেছে নাগরিকের।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, খরচটা যদি পরিকল্পনা মাফিক করা যেতো তাহলে সেটা কাজে লাগতো। আমরা তো সেটা দেখতে পাচ্ছি না। বরং ডেঙ্গু আরও নতুন শক্তিতে এবার আক্রমণ করেছে। একজন কীটতত্ত্ববিদ যে কাজটা করবেন বা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা যদি প্রশাসনের কেউ নেয় তাহলে সে সিদ্ধান্ত তো সঠিক হবে না।
প্রসঙ্গত, মশার লার্ভা নিধনে লার্ভিসাইডিং এবং উড়ন্ত মশক নিধনে ফগিং চলছে সেই ২০০০ সাল থেকে। জলাশয়ে হাঁস, ব্যাঙ ও গাপ্পি মাছ ছেড়ে লার্ভা নিধনের চেষ্টাও হয়েছে। কদমগাছে ফিঙে পাখি এনে উড়ন্ত মশা নিধনের চেষ্টাও দেখেছেন অনেকে। এ বছর ড্রোন দিয়েও মশা খুঁজতে দেখা গেছে সিটি করপোরেশনকে। এতো কিছুর পরও কমেনি মশার উপদ্রব।
মন্তব্য করুনঃ