রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের দক্ষিণ হিরাচর গ্রামে উত্তম চাকমা জন্ম। বাবা-মা,দুই ভাই ও এক বোনকে নিয়ে তাদের পাঁচ সদস্যের পরিবার। ছোটবেলা থেকেই অভাবের সংসার দেখতে দেখতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। একমাত্র উপার্জনকারী বাবা বিমল চন্দ্র চাকমা পেশায় ছিলেন কৃষক। মা গৃহিণী শোভা মালা চাকমা। বাবা সারা দিন একা খেটে পরিবারের সবার খরচ চালানোটা হয়ে গিয়েছিল অনেক কষ্টকর।
উত্তম চাকমা বলছিলেন, স্কুল শেষে ছুটে যেতেন বাবার কাছে তাঁর কাজে সাহায্য করতে। অল্প পরিমাণ জমি ছিল তাদের। বাবার উপার্জনে সবার পড়াশোনার খরচ চালানোটাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ছাত্র হিসেবে উত্তম ছিলেন খুবই মেধাবী। তিনি প্রাইমারি লেভেল শেষ করার পরে ভর্তি হন আমতলী ইসলামিক সেন্টার উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় স্কুলের মাসিক ফি দিতে হতো না। জেএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর ভর্তি হন রাঙামাটির কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন ট্রেডে নবম শ্রেণিতে। সেখানেও তিনি প্রথমস্থান অর্জন করেন।
পরে একই বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি (ভকেশনাল) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। তাঁর এই সফলতা প্রথম আলোতে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করে তাঁকে শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনা হয়।
শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে অনেকটা নির্ভার হন। নিশ্চিন্তে মনে পড়াশোনা করে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। এখান থেকে ২০১৮ সালে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা শেষ করেন। বর্তমানে তিনি মোনঘর শিশু সদনের অধীনে মোনঘর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
উত্তম বলেন, ‘অভাবের কারণে যেখানে আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখে। প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার।’
দ্রুত কর্মজীবনে প্রবেশ করে পরিবারের হাল ধরার জন্য কারিগরি শিক্ষায় সহায়তা প্রদান করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এতে সহযোগী হয় সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এসডিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। উত্তম চাকমা এই প্রকল্প থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি বিভাগে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।
মন্তব্য করুনঃ