• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৭:১৪:১৪ (27-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

১২:৪৩ পিএম, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩


ক্যাটাগরি

বাংলাদেশ
রাজনীতি
আওয়ামী লীগ
সারাদেশ
প্রধানমন্ত্রী কর্নার

ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ নির্দেশনা


মঙ্গলবার ২৪শে জানুয়ারী ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩



ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ নির্দেশনা

ছবি সংগৃহীত

চ্যানেল এস ডেস্ক : 

আর্থিক কারণে ইভিএম কেনা বাতিল করা হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ সময়ে ইভিএম অগ্রাধিকার নয়। এর প্রয়োজন এখনই নয়; এমন খাতে ব্যয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার। এখন মূলত মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা, কল্যাণকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। 

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি। 

বিশ্বের সব দেশই আর্থিক সংকটে আছে উল্লেখ করে ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। আর আপনারা দেশের মানুষের সেবক এ কথাটি মনে রাখতে হবে। জনগণের টাকায় সবকিছু করা হয়। তাই গুজব প্রতিরোধের পাশাপাশি পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং করতে হবে। 

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিকভাবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটা বিপর্যয় চলছে। তাই অপ্রয়োজনীয় খরচের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 

নিজ নিজ জেলায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে ডিসিদের তদারকির কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষের খাদ্য ও চিকিৎসা ঠিক রাখতে হবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা ঠিক রাখতে হবে। কাজেই সব পরিস্থিতি উত্তরণ করেই আমাদের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে হবে।’ 

এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মোট ২৬টি অধিবেশন থাকছে। এর মধ্যে ২০টি থাকবে কার্য অধিবেশন। অর্থাৎ এসব বৈঠক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে করা হবে। 

এ সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসকরা রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি ও স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের কাছ থেকেও নির্দেশনা গ্রহণ করবেন। এ বছর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে মোট ২৪৫টি প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পর্কিত ২৩টি, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ১৫টি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ১৩টি, সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ১১টি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণায় থেকে ১০টি এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ থেকে ১০টি প্রস্তাব রয়েছে। 

এসময় মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, গুজব, খাদ্যে ভেজাল, সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, জনগণকে সরকারি সেবা প্রধান, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ২৫টি নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্দেশনাগুলো হলো:
১. খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। পতিত জমিতে ফসল ফলাতে হবে। কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

২. নিজেরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

৩. সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত।

৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে।

৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।

৬. দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাস জমি বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। জমি ও ঘর দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

৮. কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসমূহ যেন কার্যকর থাকে তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে।

৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রত্যেক এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

১১. পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে।

১২. সরকারি দপ্তরসমূহের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। নিজ নিজ জেলায় সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে।

১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে।

১৪. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনোভাবেই অবনতি না হয় সে লক্ষ্যে নজরদারি জোরদার করতে হবে।

১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করতে হবে। নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয় সেজন্য সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। যুবসমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

১৭. বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।

১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে, কৃত্রিম সঙ্কট রোধ ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

১৯. সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে।

২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বাড়াতে হবে। সুইচগেট বা অন্য কোনো কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে।

২২. পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে।

২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার, বিপণন ও ব্র্যান্ডিং করতে হবে।

২৪. জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয় সে লক্ষ্যে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।

২৫. জেলার সব সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ