চ্যানেল এস ডেস্ক:
হারিয়ে যাওয়ার ৩৫ বছর পর এক বাবা তাঁর সন্তানকে জড়িয়ে ধরছেন, স্বামীকে পেয়ে কাঁদছেন স্ত্রী। কাঁদছেন সবাই খুশিতে। অনিনন্দ্যসুন্দর এই ঘটনা ঘটেছে বরিশালে।
ভাগ্য বদলের আশায় ৩৫ বছর আগে ইরান যাওয়া উদ্যোগ নেন বরিশালের বাকেরগঞ্জের দুধল গ্রামের আবদুল জব্বার। দালালরা তাঁকে জানান, প্রথমে তাঁকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে পাকিস্তান হয়ে ইরানে যাবেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি পাকিস্তানেই আটকা পড়েন। এর ছয় মাস পর আব্দুল জব্বারের পরিবার একটি চিঠি পান। চিঠিতে লেখা ছিল, আব্দুল জব্বার বিপদে আছেন। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই। পরিবার জানে না, বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন। মাঝখানে কেটে যায় ৩৫ বছর।
আবদুল জব্বার যখন বিদেশে যান তখন তাঁর বড় ছেলে আবুল হোসেনের বয়স তিন, কন্যা নুপুরের বয়স দুই আর ছোট সন্তান কামাল তখনও পৃথিবীতে আসেনি। স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা রেখেই বিদেশে যান তিনি। বাবা বিদেশে যাওয়ার তিনমাস পর জন্ম হয় কামালের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা কামাল কখনও বাবাকে দেখেননি। বাবার স্পর্শ পাননি। এখানে–ওখানে খোঁজ করেও বাবার কোনো সন্ধান পাননি।
কিছু দিন আগে হঠাৎ পাকিস্তান থেকে তাঁদের এক আত্মীয়ের ঠিকানায় একটি চিঠি আসে। সেই চিঠির সূত্র ধরে পাকিস্তানের বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপে পোস্ট দেন কামাল। চিঠির ঠিকানায় গিয়ে তাঁর বাবার খোঁজ করতে বলেন। একজন চিকিৎসক তাতে সাড়া দেন। তিনি ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে জানান, কামালের বাবা সেখানে বেঁচে আছেন।
একই সময়ে কামাল গণমাধ্যমে একটা খবর দেখেন যে, ব্র্যাকের সহায়তায় ২৫ বছর পর সৌদি আরব প্রবাসী আবুল কাশেমের সন্ধান পেয়েছে তাঁর সন্তানেরা। নতুন আশায় কামাল যোগাযোগ করেন ব্র্যাকে। ব্র্যাকের কারও নম্বর ছিল না কামালের কাছে। এরপর কামাল ব্র্যাকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে মেসেজ দিয়ে জানান, তাঁর বাবা পাকিস্তানে আটকা ৩৫ বছর ধরে।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘কাশেম চাচার ঘটনার পর সারা দেশ থেকে এমন একাধিক ঘটনার খোঁজ পাই আমরা। প্রত্যেকেটা নিয়েই কাজ করছিলাম। এর মধ্যে আমাদের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কমিউনিকেশন ম্যানেজার আয়মান আপা আমাদের পাকিস্তানে আবদুল জব্বার মানে কামালের বাবার ঘটনা জানান।’
পরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন কর্মসূচির দুই কর্মী রায়হান কবির ও আল আমিন নয়নকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা তথ্য নিয়ে জানতে পারেন, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৩৫ বছরে ধরে পাকিস্তানে আটকা পড়ে আছেন আব্দুল জব্বার। এরপর আব্দুল জব্বারের সব তথ্য জোগাড় করে ব্র্যাক মাইগ্রেশন বিভাগ যোগাযোগ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। আবেদন করা হয় আব্দুল জব্বারকে ফিরিয়ে আনার।
এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করে পাকিস্তান দূতাবাসে। শুরু হয় অপেক্ষার পালা। এক সময় পাকিস্তান থেকে পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি আসে আবদুল জব্বারের পরিচয় নিশ্চিত করতে। অল্প দিনের মধ্যেই পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাগরিকত্ব নিশ্চিতকরণ চিঠি পাঠানো হয় পাকিস্তানে। এরপর আবার অপেক্ষা। কয়েক মাস অপেক্ষার পর গতকাল শুক্রবার রাতে দেশে ফেরেন আব্দুল জব্বার। জন্ম হয় এক আনন্দময় কান্নার দৃশ্য।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বাবাকে ছুঁয়ে দেখার আকুতি পূরণ হওয়ায় কান্নাজড়িত কন্ঠে ছেলে কামাল ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাস, পুলিশ, ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচির কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
মন্তব্য করুনঃ