• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৬ই বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১২:২৩:৫৩ (20-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

শতভাগ বাল্যবিবাহের গ্রামের সেই মেয়েটা এখন কলেজে পড়ে


বৃহঃস্পতিবার ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ০৮:৫০



শতভাগ বাল্যবিবাহের গ্রামের সেই মেয়েটা এখন কলেজে পড়ে

মাহফুজা খাতুন

চরখিদিরপুরের তিন দিকে সীমান্ত আর অন্যদিকে পদ্মা। নদীর ভাঙনে দু-এক বছর পর হয়তো দুর্গম গ্রামটি দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। তবে টিকে থাকবেন চরের মাহফুজারা। তবে তাঁদের গল্প শোনার আগে চলুন চরের লোকজনের সঙ্গে একটু পরিচিত হই।

পদ্মায় মাছ শিকার আর চরে গবাদিপশু পালনই চরখিদিরপুরের লোকজনের প্রধান জীবিকা। পঞ্চম শ্রেণির পরও যে লেখাপড়া করা যায়, গ্রামের খুব কম মানুষই তা জানত, কোনো দিন জানার দরকারও পড়েনি। গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কোনোমতে পাস করার পর রাখাল বা মাঝি হয়ে যেত ছেলেরা। খুব কম মেয়েই পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে পারত। তার আগেই তাদের বিয়ে হয়ে যেত। রাজশাহীর পবা উপজেলার গ্রামটি একসময় শতভাগ বাল্যবিবাহের গ্রাম বলে পরিচিত ছিল।

২০১৫ সাল থেকে গ্রামের চেহারা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। সে বছরই গ্রামে স্থাপন করা হয় প্রথম আলো ট্রাস্টের চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালা। মাধ্যমিক পড়ার সুযোগ পায় গ্রামের ছেলেমেয়েরা। শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি, এ রকম অবহেলিত এলাকায় সামিট গ্রুপের আর্থিক সহযোগিতায় আর প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে পরিচালিত হয় আলোর পাঠশালা। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা উপেক্ষা করে ট্রলারে উত্তাল পদ্মা পার হয়ে প্রতিদিন চরখিদিরপুরে যান আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের এত পরিশ্রম, এত চেষ্টা যে বৃথা যায়নি, তার প্রমাণ মাহফুজা খাতুন।

২০১৬ সালের জেএসসি পরীক্ষা দেন মাহফুজা। জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ফলাফল ভালো করে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মাহফুজা। পাশে থাকে তাঁর পরিবার। ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৬১ পেয়ে পাস করেন। ভর্তি হন রাজশাহীর শাহ্ মখদুম কলেজে। ২০২১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান মাহফুজা। শতভাগ বাল্যবিবাহের গ্রাম চরখিদিরপুরের মেয়েটা এখন রাজশাহী কলেজে ইতিহাস বিভাগে পড়ছেন।

মাহফুজার পরিবারের পক্ষে তাঁর পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া কঠিন। আত্মীয়স্বজন বিয়ের কথা বললেও যত দূর সম্ভব পড়াশোনা করতে চান তিনি। যে আলোর পাঠশালার শিক্ষকদের সহায়তায় তিনি স্বপ্ন দেখতে শিখেছেন, তেমনই একজন শিক্ষক হতে চান মাহফুজা, ‘আমাদের গ্রামের মেয়েদের তো ছোটবেলাতেই বিয়ে হয়ে যেত। স্যার-ম্যাডামেরা না থাকলে আমাদের জীবন আজ এমন হতো না। একবার নদীভাঙনে আমাদের পাঠশালার ঘরটি ভেঙে গেল। তখন তো আমাদের পড়ানোর কোনো জায়গা ছিল না। সেই সময়েও স্যার-ম্যাডামরা রাজশাহী থেকে এসেছেন। নদীর পাড়ে শীতের ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও আমাদের পড়িয়েছেন। আমি সব সময় কৃতজ্ঞ থাকব আলোর পাঠশালার কাছে, আলোর পাঠশালার শিক্ষকদের কাছে।’

মাহফুজা আরও বলেন, ‘অনেক বাধা পার হয়ে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এসেছি। শিক্ষক হয়ে দেশের অন্ধকার দূর করতে যদি সাহায্য করতে পারি, তবে সেটাই হবে আমার জীবনের প্রাপ্তি। আমি চাই, চরসহ দেশের কোনো মানুষই যেন নিরক্ষর না থাকে।’

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ