চ্যানেল এস ডেস্ক:
মিয়ানমার থেকে গুলিবিদ্ধ এক নারীসহ ৫ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে। আজ শনিবার বিকেলে নৌকায় নাফ নদী পার হয়ে জেটিঘাটে পৌঁছান তারা। এদিকে, টেকনাফ সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি থামেনি। শুক্রবার রাতে পরিস্থিতি শান্ত মনে হলেও শনিবার সকালে দুই ঘণ্টা ধরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। দিনভর থেমে থেমে এই অবস্থা চলতে থাকে। থেমে থেমে গুলির শব্দ হওয়ায় অনেকটা আতঙ্কে রয়েছে সীমান্ত পাড়ের মানুষ।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীতে টহল দিচ্ছে কোস্ট গার্ড। ট্রলারে করে আসা লোকজন বাংলাদেশি নাগরিক কি-না তাও যাচাই বাছাই করছে তারা। এরই মধ্যে শনিবার বিকেলে মিয়ানমার থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক নারীসহ ৫ রোহিঙ্গা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে আশ্রয় নিয়েছেন।
এপারে বাংলাদেশের শাহপরীর দ্বীপ, ওপারে মিয়ানমারের মংডু শহর। গেল কয়েকদিন মংডুর আশপাশের গ্রামে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে আছেন টেকনাফের বাসিন্দারা।
মিয়ানমারে সহিংসতার প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় এপারে সীমাম্তে কড়া নজরদারি রেখেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। এছাড়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্কতার কথা জানালেন স্থানীয়রা।
টেকনাফ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি সদস্য সোনা আলী বলেন, ‘কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত হয়ে মিয়ানমার অংশে আবারও গোলাগুলি হচ্ছে। শুক্রবার রাতভর শান্ত থাকলেও শনিবার সকালে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত গুলির শব্দ শোনা যায়। থেমে থেমে গুলির শব্দ হওয়ায় অনেকটা আতঙ্ক রয়েছে সীমান্ত পাড়ের মানুষ। শনিবার বিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে কাঠের নৌকায় করে শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে এসেছে এক নারীসহ ৫ রোহিঙ্গা।’
নাফ নদী দিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াতের পর্যটকবাহী জাহাজগুলো এখন বন্ধ আছে। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে মাছ ধরাও।
সাত কিলোমিটার এই নাফ নদী ভাগ করেছে দুই দেশকে। ওপারে মিয়ানমার। সেখানে চলছে গৃহযুদ্ধ। স্থানীয়রা বলছেন, এপারে কোনো না কোনো সময় গোলার আওয়াজে কেঁপে উঠছে সীমান্ত। আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা।
মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় অংশ পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে যুদ্ধ জোরাল করেছে আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী কয়েকটি গোষ্ঠী। এতে বাংলাদেশ সীমান্তেও উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে এ সংঘাতের কারণে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। ইতিমধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাতে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর ৩৩০ সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। নির্মমভাবে দমন করা হয় বিক্ষোভকারীদের। জবাবে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় গণতন্ত্রকামীরা। বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় তারা। পাশাপাশি আরাকান আর্মি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি ও ট্যাঙ্গ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি নিয়ে গঠিত থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্স সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। গত তিন বছরের গৃহযুদ্ধে ৩ শর বেশি সেনা চৌকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চিন রাজ্যে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটি বলছে, রাখাইনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সেনা সদরদপ্তরের দখল নিয়েছে তারা। ২০২২ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশ সীমান্তে। তখনও কিছু গোলা এসে পড়ার ঘটনাও ঘটে।
মন্তব্য করুনঃ