ফরিদপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযানের নামে হামলা করার অভিযোগ করেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে পুরনো গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে।
বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি।
এ সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপির সহযোগী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ অভিযোগগুলো তুলে ধরেন।
বিভাগীয় এ মহাসমাবশে এ জে এম জাহিদ হোসেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি এবং শামা ওবায়েদ সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির উদ্যোগে ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বেলা ১১টায় কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে এ সমাবেশ শুরু হবে। এতে ফরিদপুরের পাঁচটি জেলা ছাড়াও কুষ্টিয়া, যশোর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকেও লোকজন সমবেত হবে। সব বাধা উপেক্ষা করে ফরিদপুরের গণসমাবেশ ইতিহাস সৃষ্টি করবে। এ এলাকার মানুষ বুঝিয়ে দেবে আমরা নদী ভাঙ্গা ও প্রাকৃতিক দৈব্য দুর্বিপাক সহ্য করা মানুষ। এ এলাকার মানুষ কাউকে পরোয়া করে না।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই। আমরা অন্তত এক মাস আগে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দেয়নি। বাধা দেয়া বা বাধাগ্রস্ত করার এমন কোন পথ ছিল না যা আগের সমাবেশগুলিতে হয়নি, ফরিদপুর তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আমাদের বলা হয়েছে অন্যদল মাঠ চেয়েছে। এ কৌশল তারা অন্য বিভাগীয় সমাবেশের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেছে সরকার। একই কায়দায় ডাকা হয়েছে বাস ও মিনিবাসের ধর্মঘট। শ্রমিক ও মালিকরা একই কৌশলে কাজ করছে।
এ জেড এম জাহিদ বলেন, দেশে গণতন্ত্র, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। সাংবাদিকদের বিভিন্ন আইন দিয়ে বাধা দিচ্ছে, অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। দেশে অর্থনীতির সংকট চরমে। শ্রীলংকার মত পরিস্থিতি হবে কিনা তা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে? এতদিন বলা হতো মেগা প্রকল্প, মধ্য আয়ের দেশের কথা। আজ বলা হচ্ছে দুর্ভিক্ষের কথা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি নিজেদের জন্য এ গণসমাবেশ করছে না, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করেতে এ আন্দোলন করছে। তাই এটা বিএনপির গণসমাবেশ নয়, গণমানুষের গণ দাবি আদায়ের সমাবেশ। গণসমাবেশের আগে অতি উৎসাহী পুলিশরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। তারা পুরনো ওয়ারেন্ট তামিল করার নামে বিএনপির নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করছেন। নগরকান্দায় সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। গত রাতে জেলা ও মহানগর বিভিন্ন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে পুলিশ নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। কোন কিছু দিয়ে এ সমাবেশ বানচাল করা যাবে না। বানচাল করার চেষ্টা করা হলে ফরিদপুরের আনাকে কানাচে সমাবেশ হবে। তবে এতে কোনো কাজ হবে না। গ্রেফতার করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দেবে।
‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাস, আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না’ মন্তব্য করে এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কারই আমাদের লাখ।
তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব দলের প্রতি সমান সুযোগ করে দিন। রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। যার যার অবস্থান থেকে সবাই রাজনীতি করুক। কেউ কারো সঙ্গে ঝামেলা যেন না করে এ দায়িত্ব প্রশাসনের। আমরা সবার সাহায্য চাই।
শামা ওবায়েদ বলেন, সারাদেশে আজ গণ জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাড়িতে অভিযানের নামে হামলা করছে। দুর্ব্যবহার করছে। তবে জনগণ আর বসে থাকবে না। বিএনপির নেতৃত্বে তারা সমবেত হয়ে দাবি আদায় করে নেবে। ফরিদপুরে অন্তত ছয়জন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে হামলা করেছে পুলিশ। বিএনপির নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে অভিযান করে তার ভাইকে আটক করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ, কেন্দ্রীয় বিএনপির দুই সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান ও মো. সেলিমুজ্জামান, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিক, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসির ও ইয়াসমিন আরা হক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া প্রমুখ।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদান হোসাইন বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, ওয়ারেন্ট রয়েছে এবং আইন শৃঙ্খলা অবনতি করার রেকর্ড আছে, পুলিশ নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে তাদের বাড়িতে গেছে তল্লাশি করেছে। এ সময় কোনো নারীর সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা হয়নি। যে অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে আনা হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই।
মন্তব্য করুনঃ