চ্যানেল এস ডেস্ক:
দুর্গাপূজা কেন্দ্র করে প্রতিবছরই দেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব এ দুর্গাপূজা। এ বছর ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে এ ধর্মীয় উৎসব।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশে মণ্ডপে মণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। পূজা কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বেশ সজাগ। পুলিশ র্যাবের পাশাপাশি কঠোর নজরদারিতে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। কারণ পূজার দুই মাস পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এজন্য ঢাকাসহ সারাদেশে ৩২ হাজার ৪০৭টি মণ্ডপের নিরাপত্তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পূজার সময় কঠোর নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পুলিশ সদরদপ্তর থেকেও সব জেলায় জেলায় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও নিরাপত্তার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে যেন পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা না ঘটে তাই সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা শেষ করতে বদ্ধপরিকর সরকার।
মণ্ডপে মণ্ডপে উৎসবের আনন্দ বিরাজ করলেও তারপরও শঙ্কায় রয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নেতারা বলছেন, এবছর জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির মধ্যে গুজব নিয়ে বেশি শঙ্কা রয়েছে। কারণ দুই বছর আগে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় দুর্গাপূজায় গুজবকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপূজা ঘিরে ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে কেউ যেন গুজব ছড়াতে না পারে, সেজন্য সাইবার ইউনিটগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। পুলিশ সদরদপ্তর ও জেলা পর্যায়ে থাকবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সারাদেশে মণ্ডপে মণ্ডপে পুলিশের পাশাপাশি দুই লাখ আনসারও থাকবে। কোনো পূজামণ্ডপ থেকে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ সহযোগিতার জন্য কল এলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সম্প্রতি পুলিশ সদরদপ্তরে এক সভায় বলেন, পূজা উপলক্ষে টহল জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের স্থানীয় পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, পূজায় তিন পর্যায়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পূজার আগে, পূজা চলাকালীন এবং পূজা পরবর্তী।
গুজবের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে, গুজব রটিয়ে পূজার সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর অপচেষ্টা করা হয়। এসব অপচেষ্টা রোধে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং, সাইবার পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিটি মণ্ডপে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা ও টহল পুলিশের প্রয়োজনীয় নম্বর প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। যাতে যে কোনো সময় যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া পূজার দিনগুলোতে প্রত্যেক মণ্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল। পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হবে। সক্রিয় থাকবে গোয়েন্দা সংস্থা।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সারাদেশে র্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন প্রস্তুত রয়েছে। র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা নিয়মিতভাবে কাজ করছে। র্যাবের হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। র্যাবের ডগ স্কোয়াড কাজ করবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। সরকার তৎপর রয়েছে। আশা করছি এবারের দুর্গোৎসব ভালোভাবে সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি গণমাধ্যমকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে পূজা উদযাপনের বিষয়ে সভা হয়েছে। তারা সবাই আশ্বস্ত করেছেন। সরকার এ বিষয়ে সজাগ।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়লে হামলা-সহিংসতা কম হয়। যেমন গত বছর হামলা হয়নি। তবে এবার আশঙ্কার জায়গা হলো সামনে জাতীয় নির্বাচন।
এদিকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে বেশ কিছু নিরাপত্তামূলক পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরামর্শগুলো হলো-
পূজামণ্ডপে আগত নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক প্রবেশপথ ও প্রস্থান পথের ব্যবস্থা রাখা। পূজামণ্ডপে কোনো ব্যাগ, থলে বা পোটলা নিয়ে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা। পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন করা। গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা।
পূজামণ্ডপে ও প্রতিমা বিসর্জনস্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা। সম্ভব হলে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর, চার্জার লাইট, হ্যাজাক লাইট ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা।
পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা। স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও স্বেচ্ছাসেবক লেখা আর্মড ব্যান্ড প্রদান করা।
পূজা চলাকালে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো থেকে বিরত থাকা।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার অথবা ব্লগ ইত্যাদি এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন অমূলক ঘটনা বা গুজব সৃষ্টি করে কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে পুলিশকে জানানো।
পূজা উদযাপনকালে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। আজান ও নামাজের সময় মাইক ও বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখা।
প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রার নির্ধারিত রুট ব্যবহার করা। পূজামণ্ডপে শোভাযাত্রা এবং প্রতিমা বিসর্জনের সময় দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা। রাতের বেলায় পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
প্রয়োজনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুম : ০১৩২০০০১২৯৯, ০১৩২০০০১৩০০, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কন্ট্রোল রুম : ০২-৫৫১০২৬৬৬, ০২-২২৩৩৮১১৮৮, ০২-৪৭১১৯৯৮৮, ০১৩২০০৩৭৮৪৫-৪৬, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কন্ট্রোল রুম : ০২-৪৮৯৬৩১১৭, ০১৭৭৭৭২০০২৯ এবং ফায়ার সার্ভিস সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম : ০২-২২৩৩৫৫৫৫৫, ০১৭১৩০৩১৮১-৮২ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়।
এ ছাড়া যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সেবা পেতে টোল ফ্রি জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে কল করতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুনঃ