• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৭ই পৌষ ১৪৩১ রাত ১০:১৪:৩০ (21-Dec-2024)
  • - ৩৩° সে:

মানকচুতে মোরগের ঝোল


রবিবার ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ০৭:৫৪



মানকচুতে মোরগের ঝোল

মানকচুতে মোরগের ঝোল

আমার বন্ধু কান্তা কাবির। একজন কসমোটলজিস্ট। নিউইয়র্কে নিজের পার্লারে (যৌথ মালিকানা) কাজ করেন। সপ্তাহে ৬ দিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা করে কাজের পরও প্রতিদিন রান্না করেন। স্বামী-সন্তানের পাতে বাসি খাবার তুলে দিতে তাঁর ভালো লাগে না। মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানোতেও তাঁর মহা আনন্দ। ফলে কারণে–অকারণে কান্তার বাসায় যাওয়া আর খাওয়া হয়। ওকে ফোন দিয়ে বললাম, ‘তুমি তো বলেছিলে, আজ মানকচু দিয়ে মুরগির মাংস রান্নার রেসিপি দেবে। আমি মোরগ আর চুক (মানকচু) কিনে রেখেছি। বল কীভাবে শুরু করব?’

কান্তা বলে, ‘মসলাপাতি সব আছে কি না, দেখ তো? জিরা ও হলুদগুঁড়া ২ চা–চামচ, মরিচগুঁড়া ৩ টেবিল চামচ, চিলি ফ্লেক্স ১ টেবিল চামচ অথবা ৪–৫টি শুকনা মরিচ, আদা ও রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ।

গরম মশলা: ২টি স্টার মসলা, ৫/৬টি সাদা ও কালো এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গ, কাবাবচিনি ও ২টি দারুচিনি। দুই কাপ পেঁয়াজ।

আস্ত জিরা, ধনে ও মেথি। একটা সুইট চিলি (যদি থাকে)। চামড়াসহ দেশি মোরগের মাংস ৩ পাউন্ড। ১ কেজি মানকচু।’

‘কিছু মসলার নাম আজ প্রথম শুনলাম! যেমন কাবাবচিনি, কালো এলাচ, স্টার...’
ফোনের ওপাশ থেকে কান্তা হাসতে হাসতে বলে, ‘তা আমরা আগেই জানি। ‌এই মসলাগুলো এখানে পাওয়া যায় না। আমি দেশ থেকে আনাই। আজ তোমার আর রান্না করার দরকার নাই। এ রান্নাটা একটু জটিল। আজ তুমি দেখো, অন্যদিন নিজে রান্না করো। আমরা একটা প্ল্যান করে রেখেছি নাও কাবিরের (কান্তার হাজবেন্ড) সঙ্গে কথা বলো।’

কাবির হোসেন বলেন, ‘লিটন রেডি হয়ে নাও, আমি গাড়ি নিয়ে আসতেছি। একসঙ্গে রান্না করে খাওয়াদাওয়া করব। খুব মজা হবে।’

কান্তা ফোন নিয়ে বলে, ‘তুমি আসতে আসতে আমি কচুগুলোকে ছিলে মাংসের চেয়ে একটু ছোট আকৃতির করে কেটে লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখব ২০ মিনিট। চামড়াসহ মোরগটাকে ধুয়ে রক্ত–পানি ঝরিয়ে নিয়ে লবণ, হলুদ আর মরিচের গুঁড়া মেখে রাখব প্রায় ২০ মিনিট। মোরগের চামড়া ফেলে দিলে কিন্তু তরকারির স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে।’

মানকচুর টুকরোগুলো কষিয়ে রান্না করবেন 

কুইন্স থেকে দ্য ব্রংসে কান্তার বাসায় এসে দেখি, সে সবকিছু ছবির মতো সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। বলল, ‘তোমরা আসতে আসতে আমি কিছু কাজ কমিয়ে রেখেছি। শর্ষের তেলে কিছু পেঁয়াজ, গোটা শুকনা মরিচ, জিরা, মেথি এবং ধনিয়া হালকা ভেজে তুলে রেখেছি, রান্নার শেষের দিকে এটা কাজে লাগবে। ওই তেলেই ভেজে রাখা মসলা আর গরম মসলাগুলো বাদে আর সব মসলার অর্ধেকটা ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। যেমন পেঁয়াজ, রসুন, আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি। খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবে যেন নিচে ধরে না যায়। বার বার একটু একটু করে পানি যোগ করতে হবে। মসলার তেল ওপরে ভেসে এলে কেটে রাখা মানকচুগুলো ছেড়ে দিতে হবে।’

‘মানকচু কতক্ষণ জ্বাল দেব?’

‘বেশি জ্বাল হলে কচু কিন্তু ভর্তা হয়ে যাবে। তখন তরকারি আর রান্না করতে হবে না। তাই খুব সাবধান। চুলার আঁচ রাখতে হবে মিডিয়াম থেকে একটু কম। মিনিট ধরে বলা মুশকিল তবে ৮০ শতাংশ সেদ্ধ হলে একটু শক্ত শক্ত ভাব থাকতেই নামিয়ে রাখতে হবে চুলা থেকে। এবার আরেকটি পাত্রে আবার তেল নিতে হবে। তেল গরম হলে পেঁয়াজ, রসুন ও আদাবাটাসহ বাকি সব মসলা (বাকি অর্ধেক মসলা) কষাতে হবে প্রায় ২০ মিনিট। এরপর ঝোলের পানি দিয়ে ঢাকা দিতে হবে আরও ২০ মিনিট। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে স্টার, সাদা ও কালো এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গ, কাবাবচিনি, দারুচিনি সব গরম মসলা একটু ভেজে গুঁড়া করে দিয়ে দিতে হবে। এভাবে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল হবে আরও পাঁচ মিনিট।’\

ভাজা মশলাগুলো এভাবে বেটে নেবেন

এই জায়গাটাতে আমার রান্নার সঙ্গে একটু পার্থক্য দেখা দিয়েছে, তাই প্রশ্ন করলাম, ‘আমি সাধারণত অন্য মসলার সঙ্গে গরম মসলা দিয়ে মসলা কসাই। তুমি পরে গুঁড়া করে দিচ্ছ কেন?’

কান্তা বলে, ‘আগেও দিতে পারো, পরে দিলে সুবাসটা ভালো পাওয়া যায়। আমরা কিন্তু রান্নার প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন ওই যে উঠিয়ে রেখেছিলাম কচু, তা দিয়ে দিতে হবে মাংসের সঙ্গে। এখন ভেজে রাখা শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ, গোটা জিরা, মেথি এবং ধনিয়া হালকা একটু বেটে দিয়ে দিতে হবে। এ সময় দিয়ে দাও সুইট চিলি। বেশি ঝাল খেলে দিতে পারো কামরাঙ্গা মরিচ। খুব সাবধানে নাড়তে হবে। একটু উনিশ–বিশ হলেই কিন্তু কচু গলে তরকারির স্বাদ পুরো নষ্ট হয়ে যাবে।’

রান্না হয়ে গেছে

‘এসব কীভাবে বাটবো?’

‘আমি তো শিল–পাটায় বাটি। তুমি হামানদিস্তা বা প্লেটের মধ্যে এসব রেখে পানি খাওয়ার কাচের গ্লাস দিয়েও হালকা করে গুঁড়া করতে পারো। এসব দেওয়ার পর আরও পাঁচ মিনিট ঢাকনা খুলে জ্বাল দিতে হবে। এবার চুলা বন্ধ করে ঢেকে রাখতে হবে আরও ১০ মিনিট। ব্যস, রান্না শেষ।’


তরকারি হালকা ঠান্ডা হলে মোটা চালের সাদা ভাত দিয়ে খেয়েছিলাম আমরা। ঢাকনা খোলার পর যে সুবাস, তাতেই অনায়াসে খেয়ে ফেলা যায় দু-এক প্লেট ভাত।
কাবির ভাই স্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, এত কঠিন একটা রান্না তুমি তো বেশ সহজ করে বুঝিয়ে দিলে আমাদের!

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ





















-->