• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৭ই পৌষ ১৪৩১ রাত ১০:৫২:৩৯ (21-Dec-2024)
  • - ৩৩° সে:

ব্রহ্মপুত্রে চীনের বাঁধ, বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ


বুধবার ১৬ই আগস্ট ২০২৩ দুপুর ০১:৪০



ব্রহ্মপুত্রে চীনের বাঁধ, বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ

ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 

ব্রহ্মপুত্র নদের নিচের অংশে আটটি হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধ তৈরি করেছে এশিয়ার বৃহৎ দেশ চীন। আর এই নদে তৈরি বাঁধগুলো বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আটটি বাঁধের মধ্যে কয়েকটি ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। আর বাকিগুলোর কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। 

চীনের ১৪তম পঞ্চবর্ষীয় পরিকল্পনার (২০২১-২৫) তথ্য অনুযায়ী, তিব্বতের লিঞ্জাইয়ে অবস্থিত নদের বাঁকে নবম বাঁধটি তৈরি করা হতে পারে। 

বাংলাদেশ হলো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় নদীমাতৃক দেশ এবং অর্থনীতিসহ সবদিক দিয়ে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। বাংলাদেশের নদী পাড়ের মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য সম্পূর্ণভাবে নদীর ওপর নির্ভরশীল। যার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ অন্যতম। 

শক্তিশালী নদ ব্রহ্মপুত্র বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও এটিকে যমুনা আবার কোথাও ইয়ারলুং সাংপো নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশে এটি যমুনা নামে পরিচিত। 

ব্রহ্মপুত্র একটি আন্তঃসীমান্ত নদ। চলার পথে এটি বিভিন্ন উপনদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ভূরাজনীতির অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে এ নদ। 

চীনের হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধ তৈরির কারণে নদীর নিচুভাগে অবস্থিত দেশগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে— এ নদটি তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ‘জাতীয় স্বার্থের’ দোহাই দিয়ে চীন নদটিকে ‘আন্তর্জাতিক যৌথ সম্পদের’ বদলে নিজেদের ‘কৌশলগত সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ওপর মানুষ ছাড়াও অনেক জীববৈচিত্রের বিষয়টি অন্তর্নিহিত রয়েছে। 

সিনো-ইন্ডিয়ার মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় তার মধ্যে নদটির ইস্যুটি নতুন। তবে সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর জানিয়েছে, এটি একটি সহযোগিতামূলক ইস্যু হওয়ার বদলে বিবাদের ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। 

বাংলাদেশ চীনের এসব হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায়ই বাংলাদেশ ও ভারত ব্রহ্মপুত্রসহ তীব্বতের নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। 

পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা নদীর অববাহিকার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাঁধ নির্মাণ, ভূমিধস এবং মূল্যবান ধাতুর সন্ধানে করা মাইনিংয়ের কারণে নদটির বিরাট ক্ষতি করছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো সিয়াং ও কামেং উপনদী। এ নদীগুলোর পানি ইতোমধ্যে কালো হয়ে গেছে। 

বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যখন বাংলাদেশের পানির প্রয়োজন হবে না— তখন এই নদ দিয়ে অতিরিক্ত পানি চলে আসতে পারে। আর যখন পানির প্রয়োজন হবে তখন এটি শুষ্ক থাকতে পারে। কারণ চীন তাদের সুবিধা অনুযায়ী পানি আটকে রাখা ও ছাড়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন এই নদের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ, লাখ লাখ বাংলাদেশির জন্য ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। 

নদীমাতৃক মানুষের অধিকার আদায়কর্মী শেখ রোকন বলেছেন, চীন ভবিষ্যতে কোনো বাঁধ তৈরির আগে এ ব্যাপারে বহুপক্ষীয় আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। 

ডেইলি মিরর আরও জানিয়েছে, বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলো দিয়ে এই নদ বয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ-ভারত ও  চীনের মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে কোনো ধরনের চুক্তি নেই। আর এই নদের ব্যবস্থাপনা দুঃখজনকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। 

স্থানীয় মানুষ ও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের বাঁধ নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হবে এবং জীববৈচিত্রের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: ডেইলি মিরর

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ





















-->