চ্যানেল এস ডেস্ক:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সীমালঙ্ঘন না করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রতিমন্ত্রী জানান, নির্বাচন নিয়ে দূতাবাস ও দূতাবাস প্রধানের দৌঁড়ঝাপ ভালোভাবে নিচ্ছে না বাংলাদেশ।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তাদেরকে শুধু কালচারাল স্পেস দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশই নেবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার আগ মূহুর্তে বিদেশে কূটনীতিকদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সামনে রেখে দেশে তৎপরতা বাড়িয়েছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নিয়মিত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। এ সব ঘটনায় সরকার প্রধান থেকে শুরু করে ক্ষমতাশীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ আছে।
আমেরিকা বলে আসছে, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেখতে চায় তারা। নির্বাচনে বাধা দেওয়াদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে দেশটি। এরই মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে বলে মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে।
ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনে কোন অভিযোগ পাঠায়নি ঢাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে রেষারেষি ততই বাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার কোনো আলামত এখন পর্যন্ত নেই। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্বাচন হতে হবে এ বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই নভেম্বরেই হতে পারে নির্বাচনের তফসিল আর ভোট হবে জানুয়ারির প্রথমার্ধে।
এ অবস্থায় সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচন নিয়ে দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরেন পিটার হাস। অবশ্য বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো সুযোগ নেই।
অবশ্য নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গীদের আনতে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ আছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতায় সংলাপ বা আলোচনার বিকল্প কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপি বলে আসছে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। এর অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলোতে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গীরা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের অনেককেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজপথে নানা কর্মসূচি পালন করছেন দলটির নেতা–কর্মীরা।
আওয়ামী লীগও বলে আসছে, উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ায় এটি আর ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আগামী নির্বাচন হবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদে রেখে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে।
অন্যদিকে গত ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতা–কর্মীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মীরা কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালেও।
বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন প্রায় অর্ধশত। এ সময় সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর ওপরও হামলা করা হয়। ভাংচুর করা হয় গণমাধ্যমের কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল।
ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই দফা অবরোধ পালন শেষে বুধবার থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। বিএনপির এই অবরোধ কর্মসূচিগুলোও ছিল সহিংস। ফায়ার সার্ভিস বলছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে গত সোমবার পর্যন্ত বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে সারাদেশে মোট ১১০টি যানবাহনে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে।
এদিকে, ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় উসকানি, নাশকতা ও আগুন দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে। এ অবস্থায় বিএনপির যে কেন্দ্রীয় নেতারা বাহিরে আছেন তাদের প্রকাশ্যে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তালাবদ্ধ।
মন্তব্য করুনঃ