• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৭ই পৌষ ১৪৩১ রাত ১০:০১:৪০ (21-Dec-2024)
  • - ৩৩° সে:

আগস্ট ট্র্যাজেডির উপাখ্যান


সোমবার ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২২ ভোর ০৪:২৭



আগস্ট ট্র্যাজেডির উপাখ্যান

ফাইল ছবি

ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন আধুনিক সাহিত্যের ইতিহাসে নারী লেখকদের মধ্যে অনন্য অবস্থানে আছেন। উন্মুক্ত উদার প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠার কারণে তার মনোভূমি যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে, তেমনি ছোটবেলা থেকেই অবাধ স্বাধীনতা তার চেতনার জগতকে করেছে উজ্জ্বল।

সব মিলে সংগ্রামী চেতনা, মানবিক জীবনবোধ, মনন ও উজ্জ্বল চেতনার অধিকারী সেলিনা হোসেন। চিরায়ত স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের কথক তিনি। তার রচিত ‘আগস্টের একরাত’ (২০১৩) ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাযজ্ঞের ওপর রচিত একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনচিত্তজয়ী নেতা। তিনি পৃথিবীর মানচিত্র বদলে দিয়ে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছেন। এক রাতের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড জাতির জীবনে যে অশুভ বার্তা বয়ে এনেছিল, তারই অনন্য দলিল হয়ে আছে ‘আগস্টের একরাত’।

বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের অধিকার আন্দোলনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলনের পথিক ছিলেন তিনি। ছিলেন প্রখর মূল্যবোধসম্পন্ন একজন মানুষ। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সারাজীবন একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে প্রথমেই তিনি বলেছেন-‘একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালির সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভোররাত জাতির জীবনে একটি কলঙ্কিত রাত-যে রাতে বঙ্গবন্ধু ও তার স্বজনদের রক্তে ভেসে গেছে মানবসভ্যতা। সেই রাতকে বুকে ধারণ করে ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন সৃষ্টি করেছেন ‘আগস্টের একরাত’ উপন্যাস। এ উপন্যাস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পটভূমিতে রচিত। ওই রাতের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড জাতির জীবনের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঙ্গে মানুষের আবেগ, উচ্ছ্বাস, আনন্দ, বিষাদ, নিষ্ঠুরতাসহ পরস্পরবিরোধী নানা উপাখ্যান জড়িয়ে থাকে। সেসব ঘটনা থেকে সত্যকে বের করে এনে উপন্যাসের শরীরকে পুষ্ট করা এক দুরূহ কাজ। সেলিনা হোসেন সেই কঠিন কাজটি সার্থকতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। তিনি যখন এ উপন্যাস লিখেছেন, তখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। তথ্য-তত্ত্ব-উপাত্ত সংবলিত জবানবন্দি সত্যাসত্যভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। সাক্ষীদের একেকটি বিবরণকে তিনি উপন্যাসের চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করে কল্পনার শিল্পরাজ্যে বিচরণ করে তাকে সত্যাবহ করেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হত্যা করা হয়েছে তার সহধর্মিণী ফজিলাতুন নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, তার স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকি, পুত্র শেখ জামাল, তার স্ত্রী পারভীন জামাল রোজি, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ ভাই শেখ নাসের, বঙ্গবন্ধুর সেজো বোনের স্বামী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর মেজো বোনের বড় ছেলে শেখ ফজলুল হক মনি, শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রী বেগম আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র সুকান্ত বাবু, আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ভাইয়ের পুত্র শহিদ সেরনিয়াবাত এবং আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর খালাতো ভাই আব্দুল নঈম খান পিন্টুকে।

‘আগস্টের একরাত’ উপন্যাসে শুধু একটি রাতের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে যে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, তারই বর্ণনা আমরা দেখেছি-যা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। তাই আগস্ট মাস আমাদের জন্য শোকের মাস। সদ্যস্বাধীন দেশে শাসনকার্য চালানোর জন্য বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি। চার পাশে অরাজকতা, দারিদ্র্যের কশাঘাত, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, প্রশাসনিক দুর্বলতাসহ সমস্যার পাহাড় তৈরি হয়েছিল তখন। রাজনীতিকদের এহেন দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিল কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারামুক্ত হয়ে ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, তখন তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের পানি মুছেছেন আর বক্তৃতায় দৃপ্তকণ্ঠে বলেছেন-‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, জয় বাংলা।’

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন তার ‘আগস্টের একরাত’ উপন্যাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজের উপলব্ধিজাত অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে পাঠককে অনুসন্ধানী করে তুলেছেন। সেলিনা হোসেন তার মানবিক চেতনাবোধ থেকে মানবজাতির মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে একজন মহৎ ব্যক্তির অন্তর্ধান হিসাবেই উন্মোচন করেছেন। বঙ্গবন্ধু কখনো ভাবেননি বাংলার মানুষ তাকে মারতে পারে। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা তাকে সাবধান করেছিল; কিন্তু বিশাল হৃদয়ের এ মানুষটি তাতে গুরুত্ব দেননি। বর্ণনাতীত হিংস্রতার সঙ্গে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনসহ তাকে হত্যা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তখন থেকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়। অনেক কাছের মানুষের অনুরোধেও তিনি নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেননি। সেলিনা হোসেন এ মৃত্যুকে অত্যন্ত বেদনার্ত হৃদয়ে এভাবেই ধারণ করেছেন-‘আপনি বাংলার মানুষদের গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন। আপনি মনে করতেন বাংলার এমন কোনো মানুষ নেই যে, আপনার গায়ে হাত দিতে পারে। এ সুগভীর বিশ্বাস থেকে আপনি অন্যদের কথা বিশ্বাস করেননি। প্রত্যেকের সতর্কবাণী হেসে থামিয়ে দিয়েছেন।’

ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধুর আবেগী মনের ভালোবাসাকে। তার নিকটজনরা কীভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে; কাছের মানুষ স্বার্থের জন্য দূর থেকে দূরে চলে গেছে; তার ভালোর দিকের আলোচনা না করে সমালোচনা করতে বেশি পছন্দ করেছে-বঙ্গবন্ধু অভিমানী মনে সেসব লক্ষ করেছেন সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে। এ যন্ত্রণাকে লেখক উপন্যাসে তুলে ধরেছেন তারই বক্তব্যের মাধ্যমে-‘আপনারা যদি নিঃস্বার্থভাবে, যেভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিলেন; যেমন নিঃস্বার্থভাবে পঁচিশ বছর সংগ্রাম করেছিলেন, সেভাবে যদি সংগ্রাম না করেন অন্যায়-অবিচার দুর্নীতির বিরুদ্ধে, তাহলে দেশ গড়ার কাজে Production-এর খুবই ক্ষতি হয়ে যাবে। ...আমার পার্টি আছে এবং আপনারা পার্টির সদস্য। বহু দুঃখের দিন আমরা কাটিয়েছি। সুখের মুখ আমরা দেখি নাই। এ ক্ষমতায় যে আমরা আছি-এই ক্ষমতা সুখের নয়। এ বড় কষ্টের, বড় কণ্টকাকীর্ণ এ ক্ষমতা।’

বঙ্গবন্ধু শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন দেশ যাতে ঘুরে দাঁড়ায়। দেশ ভাগের পর পূর্ব বাংলার জনগণ যেভাবে ২৩ বছর অধিকার আদায়ের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়েছেন, সেভাবেই যেন একজন এক প্রাণ দিয়ে দেশ গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, তিনি তা বিশ্বাস করতেন না। তাই তার জীবন নিয়ে কেউ সংশয় প্রকাশ করলে তাকে আমরা বলতে শুনেছি এভাবেই-‘বাংলাদেশের মানুষকে আমি যতটা চিনি আর কেউ ততটা চেনে না। সুতরাং এসব ব্যাপার আমার ওপর ছেড়ে দাও।’ আবার বলেছেন-‘তারা আমার সন্তান। ওরা আমার কোনো ক্ষতি করবে না।’ দেশের মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা আর বিশ্বাসের ভিত্তি কতই না সুদৃঢ় ছিল। তাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে, অথচ তিনি তা বিশ্বাস করছেন না।

বাঙালি জাতি বহুদিন অপেক্ষা করেছে কী ঘটেছিল সেদিন তা জানতে। সেলিনা হোসেন সাক্ষীর জবানবন্দিতে এভাবেই তুলে এনেছেন সেদিনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা-‘‘কাঠগড়ায় সাক্ষী আবদুর রহমান শেখ রমা বলেছেন, ...প্রচণ্ড গোলাগুলি একসময় বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বঙ্গবন্ধু দরজা খুলিয়া আবার বাহিরে আসিলে আর্মিরা তাহার বেডরুমের সামনে চারপাশে তাহাকে ঘিরিয়া ফেলে। আমি আর্মিদের পেছনে ছিলাম। আর্মিদের লক্ষ করে বঙ্গবন্ধু বলেন-তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে। তাহারা বঙ্গবন্ধুকে তখন সিঁড়ির দিকে নিয়া যাইতেছিল। সিঁড়ির দুই-তিন ধাপ নামার পর নিচের দিক হইতে আর্মিরা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। গুলি খাইয়া সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু সিঁড়িতে লুটাইয়া পড়েন।

মায়াবতী মা বেগম মুজিব। শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে আব্দুর রহমান শেখের হাতে গুলি লাগা রক্ত মুছে দিলেন। আর্মিরা আবার দোতালায় এসে দরজা ধাক্কালে বেগম মুজিব দরজা খুলে দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বলেন, ‘মরিলে সবাই একসাথে মরিব।’ আর্মিরা রুমে ঢুকে পড়ে শেখ নাসের, শেখ রাসেল, বেগম মুজিবকে নিচে নিয়ে আসে। বেগম মুজিব সিঁড়িতে এসেই বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে বলে ওঠেন, ‘আমি যাইব না, আমাকে এইখানেই মেরে ফেল’।’’

বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে এ মায়ের অবদান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সত্য-নিষ্ঠার আদর্শকে উচ্চকিত করে মৃত্যুকে বরণ করার সাহসী মনোবৃত্তি বাংলার মানুষকে তথা নতুন প্রজন্মকে নব উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত করেছে। মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন শিশু শেখ রাসেল মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছিল। ভীত রাসেল পিএ মহিতুল ইসলামকে বলেছিল, ‘ভাই আমাকে মারবে না তো।’ বিশ্ব বিবেককে রক্তাক্ত ইতিহাসের সাক্ষী করে গেছে আমাদের শিশু রাসেল। এ দেশের প্রকৃতিসংলগ্ন জীবনের সঙ্গে জীবন যোগে যার বেড়ে ওঠা ছিল অধিকার।

বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য দীর্ঘ ১১ বছর জেল খেটেছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি তিনি বহুবার হয়েছেন। মৃত্যুকে ভয় পাননি। এক মমতাময় হৃদয় তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। বাংলার দুঃখী মানুষকে যেমন তিনি ভালোবাসতেন, তেমনি পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, বাবা, মা সবাইকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন। ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন ‘আগস্টের একরাত’ উপন্যাসে অত্যন্ত ব্যথাতুর হৃদয়ে সেসব স্মৃতি তুলে এনেছেন-‘ছাদে বসে বাবার মাথায় পাকা চুল বেছে দিতেন রেহানা। বাবা তার মাথাটা মেয়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে পরম আনন্দে চোখ বুজে থাকতেন। একদিন মাথায় একটা কাটা দাগ দেখিয়ে বললেন, আমার লাশ তো তোরা পাবি না, পেলেও চিনতে পারবি না। এই কাটা দাগ দেখে যদি চিনতে পারিস।’

সেলিনা হোসেন বঙ্গবন্ধু হত্যার মর্মান্তিক কাহিনি তুলে আনতে পেরেছেন সত্য ঘটনার আলোকে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সেই লোমহর্ষক কাহিনি উঠে এসেছে। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ঘাতকদের বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এ মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও আসামিদের পক্ষের সাক্ষ্যও তিনি বিস্তারিত তুলে এনেছেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে যে তথ্য-উপাত্তগুলো পেয়েছেন, তার ভিত্তিতে উপন্যাসটি রচনা করেছেন।

উপন্যাসে ইতিহাসের সত্যাসত্য তুলে আনার পাশাপাশি প্রতিটি চরিত্রের সঙ্গে মিশে গেছেন সেলিনা হোসেন। আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় বাবা, মা, ভাই, বোনসহ একত্রে বসবাসের সে বাস্তব চিত্র-কখনো আবেগ, কখনো রাগ, কখনো অভিমান, কখনো দুঃখ ঝরে পড়ে-সেসব আবেগ আর দুঃখের সংমিশ্রণে চরিত্রগুলো তিনি উপস্থাপন করেছেন। এ উপকরণগুলো বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ভিন্নধর্মী সংযোজন হয়ে থাকবে। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ১৫ আগস্টের বর্বরতার তাণ্ডব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন।

সাহিত্য একটি জাতির ঐতিহ্য আর ইতিহাসকে ধারণ করে। সেলিনা হোসেন তার ‘আগস্টের একরাত’ উপন্যাসে ১৫ আগস্টের রাতকে যেভাবে উপন্যাসে তুলে এনেছেন তা অনবদ্য। বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের সঙ্গে লেখক আত্মিক বন্ধনে একীভূত হয়ে পরিবারের আবেগ ও মমত্ববোধকে সত্যনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধু, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, কর্নেল জামিল, শেখ ফজলুল হক মনি এবং তাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের চরিত্র ও কর্মকাণ্ড তিনি খণ্ডখণ্ডভাবে আবেগমিশ্রিত উপলব্ধিজাত অনুভূতিতে উপস্থাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা সংকট, সংগ্রাম, সফলতা, ব্যর্থতা সবই তিনি কাহিনির মাধ্যমে বলে গেছেন। এখানে আমরা ঔপন্যাসিক হিসাবে তার উপলব্ধির সঙ্গে পরিপক্বতার সংমিশ্রণ দেখতে পেয়েছি।

ড. নাসরীন জেবিন : কথাসাহিত্যিক ও গবেষক

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ





















-->