স্পোর্টস ডেস্ক:
হার দিয়ে শেষ হলো নিউজিল্যান্ড সফর। হার দিয়ে শেষ হলো ২০২৩ সাল। যদিও বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইতিহাস গড়ে সিরিজ জেতা। কিন্তু সেটি আর হলো না। শেষ ম্যাচ বৃষ্টি আইনে হেরে সিরিজ জয় হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১৯.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১১০ রানে শেষ হয় টাইগারদের ইনিংস। এরপরে ১৪.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান তুলে নিউজিল্যান্ড এবং তখনই শুরু হয় বৃষ্টি। পরে ডিএলএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে জয় পায় কিউইরা।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সুখস্মৃতি। সেই মাঠেই চলতি বছর শেষবারের মতো নেমেছে টাইগাররা। জয় পেলেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জনের সুযোগ। কিন্তু সেই সুযোগ মিচেল স্যান্টনারদের ঘূর্ণিতে প্রায় উড়েই গেছে। প্রথম ইনিংসে কাজের কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে শান্ত বাহিনী।
ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ এক চারে রানের খাতা খোলেন ওপেনার সৌম্য সরকার। তাতে আশায় বুক বাঁধা। কিন্তু এরপরেই পথ হারানোর শুরু সৌম্যকে দিয়েই। ১৫ বলে ১৭ রান করা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরেছেন হতাশার কাব্য উপহার দিয়ে। সেই হতাশা আরও বেড়েছে আরেক ওপেনার রনি তালুকদারের আউটে।
মিডল অর্ডারে ভরসা রাখা তাওহীদ হৃদয়, আফিফ হোসেন, শামিম হোসেনরা দিতে পারেননি আস্থার প্রতিদান। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিলিয়েছেন নিজেদের উইকেট। তাদের মতো ব্যর্থ হয়েছেন শেষদিকের ব্যাটাররাও। তাতে বড় লক্ষ্য দূরের কথা, লড়াই করার মতো শক্ত পুঁজিই মেলেনি বাংলাদেশের ব্যাটে।
এ দিন প্রথম ওভারে সৌম্য সরকার টিম সাউদিকে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে রানের খাতা খোলেন। তখন মনে হচ্ছিল দিনটা হয়তো বাংলাদেশের হতে চলেছে। কিন্তু এরপর ক্রমেই টাইগারদের বিদায়ে বেড়েছে হতাশা। মিছিলে নাম লিখিয়েছেন আফিফ হোসেন, তাওহীদ হৃদয় ও মেহেদী হাসান ও শামিম হোসেন। কিউই অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারের শিকারে পরিণত হয়েছেন চারজনই।
ছন্দে থাকা শান্তকে বিদায় করেছেন অ্যাডাম মিলনে। এরপর বেন সিয়ার্সের বলে সাজঘরে ফিরেছেন রনি তালুকদারও। তিনি ১০ বলে করেন ১০ রান। আফিফ দিয়েছেন সহজ ক্যাচ। আউট হওয়ার আগে ১৩ বলে ২ চারে ১৪ রান করেন তিনি। শরীরের অনেক বাইরের বল খেলার চেষ্টা করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ধরা পড়েন হৃদয়। তাতে ১৮ বলে ২ চারে ১৬ রানেই বিদায় নেন তিনি। মেহেদী ও শামিম যথাক্রমে ৪ ও ৯ রান করে বিদায় নেন। শেষদিকে শরিফুলের ৪, তানভীরের ৮ ও রিশাদের ১০ রানে ভর করে বাংলাদেশ করে ১১০ রান। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন স্যান্টনার।
১১১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এরপরে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। ৪৯ রানের মধ্যে ৫ জন ব্যাটার বিদায় নেন। এর মধ্যে টিম সেফার্ট ৩ বলে ১ রান, ড্যারিল মিচেল ৫ বলে ১ রান, গ্লেন ফিলিপস ৪ বলে ১ রান ও মার্ক চ্যাপম্যান ৫ বলে ১ রান করে আউট হন। মেহেদী হাসান নিয়েছেন সেফার্ট ও মিচেলের উইকেট। শরিফুল ফিরিয়েছেন ফিলিপসকে। আর চ্যাপম্যান হয়েছেন রান আউটের শিকার।
এ দিকে একের পর এক উইকেট পড়লেও অপর প্রান্তে হাল ধরেছিলেন ওপেনার ফিন অ্যালেন। শেষ পর্যন্ত তাকেও সাজঘরে পাঠান শরিফুল। ৩১ বলে ৩৮ রান করে সরাসরি বোল্ড হয়ে বিদায় নেন কিউই ওপেনার। এরপরে ধাক্কা সামলিয়ে রান তোলার চেষ্টা করেন জেমস নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার। দুজনে মিলে ৩৭ বলে ৪৬ রান করলে বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা বন্ধ হয়। তখন নিউজিল্যান্ডকে ডিএলএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ৫ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। আর তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড জয় পেলে ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র হয়।
বাংলাদেশ: ১৯.২ ওভারে ১১০/১০ (সৌম্য ৪, রনি ১০, শান্ত ১৭, হৃদয় ১৬, আফিফ ১৪, শামিম ৯, মেহেদী ৪, রিশাদ ১০, শরিফুল ৪, তানভীর ৮ ও মুস্তাফিজ ৩* ; সাউদি ৪-০-২৫-২, মিলনে ৩.২-০-২৩-২, সিয়ার্স ৪-০-২৮-২, স্যান্টনার ৪-০-১৬-৪, সোধি ৪-০-১৬-০)।
নিউজিল্যান্ড: ১৪.৪ ওভারে ৯৫/৫ (অ্যালেন ৩৮, সেফার্ট ১, ড্যারিল ১, ফিলিপস ১, চ্যাপম্যান ১, নিশাম ২৮*, স্যান্টনার ১৮* ; তানভীর ১-০-১২-০, মেহেদী ৪-০-১৮-২, শরিফুল ৩.৪-০-১৭-২, মুস্তাফিজ ৩-০-১৩-০, রিশাদ ২-০-১৯-০ ও শান্ত ১-০-১৪-০)।
ফল: বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে জয়ী নিউজিল্যান্ড।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মিচেল স্যান্টনার।
ম্যান অব দ্য সিরিজ: শরিফুল ইসলাম।
মন্তব্য করুনঃ