চ্যানেল এস ডেস্ক:
আজ ১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এবছর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’।
ডব্লিউএইচও এর গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগ জনিত অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করেছে, যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের জন্য অসংক্রামক রোগ দায়ী হলেও এসব রোগ মোকাবেলায় অর্থ বরাদ্দের পরিমান খুবই সামান্য, মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে ওষুধ সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে এখাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
১) পোশাকের ওপর ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্রের কাফ বাঁধবেন না। এতে ৫-৫০ mmHg ইউনিট বেড়ে যেতে পারে। আসল ফলাফল নাও পেতে পারেন। তাই ত্বকের ওপর কব্জিতে সরাসরি কাফ বাঁধুন। ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্রে সাধারণত দুধরনের কাফ থাকে। এক ধরনের কাফ কব্জিতে বাঁধা হয় এবং অন্যটি বাহুতে বাঁধা হয়। বাহুতে যে কাফ বাঁধা হয়, সেটি ব্যবহার করুন।
২) রক্তচাপ মাপার সময় শান্ত হয়ে বসুন। রক্তচাপ মাপার সময় কথা বলবেন না। এ সময় নড়াচড়া করলে বা অস্থির হয়ে পড়লে ভুল ইউনিট আসতে পারে। রক্তচাপ মাপার সময় চেয়ারের ওপর বসুন এবং হাতটা টেবিলের উপর রাখুন। সঠিক ভঙ্গিতে না বসলে কিন্তু সঠিক রক্তচাপের মাত্রা জানতে পারবেন না।
৩) রক্তচাপ পরিমাপের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে খাবার, অ্যালকোহল বা ধূমপান করবেন না। এতে রক্তচাপের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। একইভাবে শরীরচর্চা করার পরই রক্তচাপ পরীক্ষা করবেন না। এ সময় রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। তাই রক্তচাপের সঠিক মাত্রা নাও পেতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কারণটি সবসময় চিহ্নিত করা যায় না। তবে বিভিন্ন কারণে এ সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে:
১. ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া
২. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
৩. খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল না থাকা
৪. অতিরিক্ত পরিমাণে মদ্যপান করা ছাড়াও অতিরিক্ত চা-কফি, কোমল পানীয় ও অন্যান্য ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খাওয়ার অভ্যাস থাকা
৫. পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা
৬. রাতে একটানা ৬-৮ ঘণ্টার চেয়ে কম ঘুমানো
সমীক্ষা বলছে, দেশে প্রতি পাঁচজনে অন্তত একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তবে ৫৯ শতাংশ রোগীই জানেন না যে, তারা গুরুতর এ সমস্যায় আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপে রোগীকে সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এ রোগটিই অন্যান্য শারীরিক নানা জটিলতা তৈরির কারণ।
১. হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে শারীরিক চলাচল কমিয়ে দিন। কেননা, এতে রক্তের চাপ আরও বেড়ে যায়।
২. রক্তের চাপ কমাতে খেতে পারেন তেঁতুলের রস। এর পরিবর্তে খেতে পারেন লেবু-পানি।
৩. আপনার খাদ্যতালিকায় আদা রাখুন। এটি একটি সুপারফুড। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও পেশি শিথিল করে।
৪. রক্তচাপ বেড়ে গেলে প্রক্রিয়াজাত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। সেই সঙ্গে চর্বিযুক্ত খাবার, খাবারের লবণ, ধূমপান এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে -- এমন খাবার এড়িয়ে চলুন।
৫. এ সময় চিনি, তেল, ঘি, মাখন ও রেডমিট একেবারেই খাওয়া যাবে না।
১. ফল খাবেন বেশি। ২. সক্রিয় থাকুন। ৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। ৫. দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।
জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনলে তা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এছাড়া এরই মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকলে সেটিও নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। বিভিন্ন রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। আপনার জন্য কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা জানতে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মন্তব্য করুনঃ