• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২২শে বৈশাখ ১৪৩১ সকাল ০৬:৫০:৫৬ (05-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

সড়ক দুর্ঘটনা তহবিলে শত কোটি টাকা, আর্থিক সহায়তার বিষয়ে জানেই না জনগণ


রবিবার ২২শে অক্টোবর ২০২৩ সকাল ১০:৩৯



সড়ক দুর্ঘটনা তহবিলে শত কোটি টাকা, আর্থিক সহায়তার বিষয়ে জানেই না জনগণ

ছবি: সংগৃহীত

চ্যানেল এস ডেস্ক: 

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য সরকারি তহবিলে ১১১ কোটি টাকা জমা হলেও তা থেকে আজ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে মাত্র ৮ কোটি টাকা! শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩(১) ধারা অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় হতাহতরা ক্ষতিপূরণ পাবেন আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে। ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কার্যকর সড়ক বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি যানবাহনের কাছ থেকে বার্ষিক চাঁদা নেয়া হয় এই তহবিলে।

তহবিলের জন্য নতুন নিবন্ধন এবং প্রতিবছর গাড়ির কাগজ হালনাগাদের সময় এই চাঁদা নেয়া হয়। মিনিবাস, মিনিট্রাক, পিকআপের বার্ষিক চাঁদা ৭৫০ টাকা। কার, জিপ, মাইক্রোবাসের চাঁদা ৫০০। তিন চাকার গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহনের চাঁদা ৩০০ টাকা। আর মোটরসাইকেলকে দিতে হয় এককালিন ১ হাজার টাকা।

এদিকে, সরকারি হিসেবে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ১২ জন। বাস্তবে হিসাবের তালিকাটা আরও দীর্ঘ। কারও কারও মতে দ্বিগুন। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন প্রতিদিন অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি। সে হিসেবে প্রতিদিন অন্তত ৮০ জনকে ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিৎ। কিন্তু সে টাকা কতজন পাচ্ছেন সেটা নিয়ে আছে ধোঁয়াশা।

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে খোজ নিয়ে জানা যায়। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অন্তত ১০০ রোগি চিকিৎসা নেন। তাদের স্বজনদের কাছেই প্রশ্ন ছিল, ক্ষতিপূরণ পাবার উপায় তারা জানেন কি? প্রশ্ন করা সাত জন ব্যক্তির স্বজনদের সবাই জানিয়েছেন তারা এ আইন সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কমপক্ষে ৩০ জনকে এই ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তবে তাদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি জানেন না বলেই জানিয়েছেন সবাই।

এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত সহায়তার জন্য আবেদন পড়েছে পাঁচশ’রও কম। এ পর্যন্ত অর্থ দেয়া হয়েছে ১৬২ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যক্তিকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণের ক্ষতিপূরণ দিতে সদিচ্ছা আর প্রচারণার অভাবেই ক্ষতিগ্রস্তরা অর্থ পাচ্ছেন না। তবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার উদ্যোগ ভালো হলেও দুর্ঘটনা কমাতে এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। আবেদন করে ক্ষতিপূরণ পাওয়া নয়, বরং কারণ অনুসন্ধান করে বিমার আওতায় ক্ষতিপূরণ দিলে দুর্ঘটনার প্রবণতা কমবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

আইনে বলা আছে, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিদের আর্থিক সহায়তা তহবিল পরিচালনায় ১২ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড থাকবে। থাকবে নিজস্ব জনবল ও নিজস্ব কার্যালয়।

এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আর্থিক এ সহায়তায় এখনও নিজস্ব কোনো জনবল নাই। অস্থায়ী ভিত্তিতে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে বিআরটিএ এর সদর কার্যালয়কে ব্যবহার করছি। কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ বিধি তৈরী করা হয়েছে।

বিআরটিএর এর মাধ্যমেই আপাতত এই ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। এই আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা আছে। এদের অনুমোদন নিয়েই সহায়তা দেয়া হয় বলেও জানান তিনি।

এমন কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ঠিক রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক এ বিষয়ে বলেন, যারা দায় নির্ধারন করবেন তাদের কম্পজিশনের মধ্যে কোনো স্পেশালিস্ট আমি দেখি না। এছাড়া এ তহবিলের যে পরিমাণ প্রচার প্রসার দরকার সেটারও ঘাটতি রয়েছে।

দীর্ঘদিন সড়ক দুর্ঘটনা ও গণপরিবহন নিয়ে গবেষণা ও কাজ করা এই অধ্যাপক আরও বলেন, অর্থ সহায়তা দেয়ার এ উদ্যোগ ভালো। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত নয়। কারণ, সড়ক দূর্ঘটনায় জীবন চলে যাচ্ছে। তবে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে তার পরিবার। এক্ষেত্রে দূর্ঘটনা কমছে না। যার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তার জরিমানা হওয়ার কথাও বলেন তিনি।

এছাড়া ইন্সুরেন্স ও পুলিশ ভিত্তিক দায় নির্ধারনের মাধ্যমে জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ দিলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে বলে মত দিয়েছেন তিনি। যাতে দুর্ঘটনা ঘটালে জরিমানার বিধানে ড্রাইভাররা সচেতন হয়ে যাবে। এর ফলে এই ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে দীর্ঘমেয়াদে ইন্সুরেন্স বেড়ে যাবে বলেও মত তার।

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ