• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ২০শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ০৯:২৩:২৯ (03-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

১৫ হাজার বছর আগে মৃতের মাংস খাওয়ার চল ছিল ইউরোপে


শনিবার ৭ই অক্টোবর ২০২৩ দুপুর ০১:২১



১৫ হাজার বছর আগে মৃতের মাংস খাওয়ার চল ছিল ইউরোপে

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 

আজ থেকে ১৫ হাজার বছর আগে সৎকার পদ্ধতি হিসেবে মৃতদের মাংস খেয়ে ফেলার সংস্কৃতি চালু ছিল ইউরোপে। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের একদল গবেষকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ তথ্য। 

মানবসভ্যতার প্রাথমিক যুগের নাম প্রস্তর যুগ। ওই সময় পাথরের তৈরি হাতিয়ার দিয়ে শিকার করত আদিম মানুষরা। এই যুগটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত— পুরোনো প্রস্তর যুগ (প্যালিওলিথিক এজ) এবং নব্যপ্রস্তুর যুগ (নিওলিথিক এজ)। 

যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেটি ছিল পুরোনো প্রস্তর যুগের শেষ ভাগ; যা শুরু হয় আজ থেকে ১৭ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় ১১ হাজার বছর আগে। ওই সময় দু’টি সংস্কৃতির মানুষ বসবাস করত ইউরোপে— ম্যাগডালেনিয়ান এবং এপিগ্রাভেটিয়ান। 

উত্তর ও উত্তরপূর্ব ইউরোপে বসবাস করত ম্যাগডালেনিয়ানদের। অন্যদিকে এপিগ্রাভেটিয়ানরা বসবাস করতে দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপে। 

মৃতের মাংস ভক্ষণের চিহ্ন পাওয়া গেছে কেবল ম্যাগডালেনিয়ান সংস্কৃতির লোকজনের মধ্যে। 

ন্যাশনার হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষকরা সম্প্রতি ইউরোপের এমন ৫৯টি প্রাচীন গুহা পরিদর্শন করেছেন, যেগুলোতে একসময় ম্যাগডালেনিয়ান লোকজনের বসবাস ছিল। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক ও পর্তুগালে অবস্থিত এই গুহাগুলো। 

এই ৫৯টি গুহার মধ্যে ২৫টিতে মৃতদেহ সৎকার সংক্রান্ত বিভিন্ন নমুনা পাওয়া গেছে। এসব নমুনার মধ্যে রয়েছে মানুষের মাথার খুলি ও দেহের বিভিন্ন অংশের হাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটার চিহ্ন। এছাড়া এসব হাড়ে দাঁতের কামড়ের  চিহ্নও শনাক্ত করতে পেরেছেন গবেষকরা।   

কোনো পশু শিকারের পর সেটির অস্থিমজ্জা ও মগজ বের করার জন্য পাথরের ধারালো অস্ত্র ব্যাবহার করতো আদিম মানুষরা। আদিম গুহাগুলোতে প্রাপ্ত মাথার খুলি ও হাড়ে ধারালো অস্ত্রের যেসব চিহ্ন দেখা গেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে— মৃতদের খুলি থেকে মগজ ও হাড় থেকে অস্থিমজ্জা বের করার চিহ্ন সেগুলো। 

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘কয়েকটি গুয়ায় এত বেশি ভাঙা-চোরা হাড় এবং খুলি পাওয়া গেছে যে সেগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। বরং এই ধারণাই প্রতীয়মান হয় যে, এসব গুহায় বসবাসকারী মানুষজন তাদের মৃত আত্মীয় ও গোত্রের সদস্যদের মাংস ভোজনে অভ্যস্ত।’ 

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য সিলভিয়া বেল্লো মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘পরিবার ও গোত্রের কোনো সদস্য মারা গেলে ম্যাগডালেনিয়া সংস্কৃতির লোকজন কবর দেওয়ার পরিবর্তে তাদের মাংস খেত।’ 

‘ওই সময় শিকার সহজলভ্য ছিল না। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে এক পর্যায়ে ম্যাগডালেনিয়া সংস্কৃতির লোকজন তাদের মৃত আত্মীয় ও গোত্রসদস্যদের মাংস খাওয়া শুরু করে। পরে এক সময় এটা তাদের প্রথা হয়ে যায়।’ 

‘প্রাচীন যুগে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মানুষের মাংস খাওয়ার যে প্রবণতা আমরা দেখতে পাই, তার শুরু হয়েছিল মৃত আত্মীয় ও গোত্রসদস্যদের মাংস ভোজনের মাধ্যমে। ইউরোপের গুহাগুলোতে যেসব নমুনা আমরা পেয়েছি, সেগুলো আসলে নরমাংস ভোজন সংস্কৃতির সবচেয়ে পুরোনো সাক্ষী,’ সিএনএনকে বলেন সিলভিয়া বেল্লো। 

প্রসঙ্গত, ম্যাগডলেনা সংস্কৃতিতে নরমাংস ভোজনের নমুনা পাওয়া গেলেও এপিগ্রাভেটিয়ান সংস্কৃতিতে এ রকম কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তারা তাদের মৃত সদস্যদের কবর দিত। 

গবেষকদের ধারণা, আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্বে এপিগ্রাভেটিয়ানদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ম্যাগডালেনিয়ানদের। তাদের সংস্পর্ষে আসার পর থেকে ধীরে ধীরে সৎকার পদ্ধতি হিসেবে মৃতের মংস ভোজনের বাদ দিয়ে মৃতদেহ কবরস্থ করার প্রথা গ্রহণ করে ম্যাগডলেনিয়ানরা। 

মন্তব্য করুনঃ