মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে দুই কলেজ শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিটের অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে। মারপিটে যোগ দেয় পুলিশের দুই সোর্সও। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় আহতদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ ও মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিন।
আহত ফয়সাল আহমেদ জানান, বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে তারা দুজন পদ্মার পাড়ে একটি নৌকাতে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ওসির বাসার কাজের লোক মাসুদ ও কনস্টেবল জব্বার উদ্দিন তাদের কাছে গাঁজা আছে বলে দেহ তল্লাশী করে। কিন্তু, কিছু না পেয়ে আবারও তল্লাশী করতে চান তারা। এর প্রতিবাদ করলে তর্ক-বির্তক হয় দুই পক্ষের মধ্যে। পরে মাসুদ ও জব্বার তাদের দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর, বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে তারা আবারও পদ্মার পাড়ে গেলে হরিরামপুর থানা পুলিশের সোর্স হিসাবে পরিচিত মামুন ও মাসুদ তাদের আবারও ডেকে জিজ্ঞাদাবাদ করে। “বার বার কেনো হয়রানি করছেন?” এমন প্রশ্ন করলে তারা দুইজন উত্তেজিত হয়ে ফয়সাল ও নিজামকে কিল ঘুষি, লাথি মারাসহ বাঁশ দিয়ে মারপিট শুরু করে। এ সময় একটু দূরেই দাঁড়িয়েছিলেন কনস্টেবল জব্বার উদ্দিন ও লতিফ। তারাও তাদের সাথে মারপিটে যোগ দেয়। এক পর্যায়ে তাদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে থানায় নেয়ার চেষ্টাও করে তারা। এ সময় আশাপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাদের রেখে পুলিশ ও থানার সোর্সরা কেটে পড়ে।
স্থানীয়রা আহত দুই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এর মধ্যে নিজামের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে থানার গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। এরইমধ্যে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান।
হরিরামপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ বলেন, পুলিশের সোর্স মাসুদ গাঁজা দিয়ে দুইজন ভাল ছেলেকে ফাঁসাতে না পেরে ব্যাপক মারধর করেছে। মাসুদ থানার বাজারসহ ওসি সাহেবের ব্যক্তিগত কাজকর্ম করেন। এ কারণেই সে ক্ষমতার দাপট দেখায়, সে নিজেকেও পুলিশ ভাবে। মামুনও পুলিশের সোর্স। তার বিরুদ্ধেও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ আছে। কনস্টেবল জব্বার উদ্দিন ও লতিফ তাদের কথা মতো দুই শিক্ষার্থীকে বেধরক মারপিট করেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, পুলিশ দুইজন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি এসপি মহোদয়কে জানিয়েছি। আমরা এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মন্তব্য করুনঃ