• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৭ই পৌষ ১৪৩১ রাত ০৯:৩৫:৩৬ (21-Dec-2024)
  • - ৩৩° সে:

বরেন্দ্রের কৃষিতে নতুন কৌশল


রবিবার ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ০৮:৪২



বরেন্দ্রের কৃষিতে নতুন কৌশল

বরেন্দ্রের কৃষিতে নতুন কৌশল

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা ধান চাষের কৌশল বদলেছেন। এবারই প্রথম বরেন্দ্র অঞ্চলে বিনা চাষে আবাদ হচ্ছে ধান। শুধু তাই নয়, ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে বেডে। চলতি আমন মৌসুমে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার ১২৬ জন কৃষক এই দুই পদ্ধতিতে আমন চাষ করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তায় ‘ক্লাইমেট স্মার্ট কনজারভেশন’ বা ‘জলবায়ু সুসামঞ্জস্য’ কৃষি প্রযুক্তির এই চাষ জনপ্রিয় করতে কাজ করছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাজশাহী অঞ্চলিক কেন্দ্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরেন্দ্র এলাকায় সেচের পানি সংকট। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রলম্বিত হচ্ছে খরা। এই পরিস্থিতিতে বিনাচাষের কৌশল ৫০ ভাগ সেচ সাশ্রয় করবে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করবে।

সুরক্ষিত থাকবে পরিবেশ। বাড়বে ফসলের নিবিড়তা এবং উৎপাদন। সব মিলিয়ে কৃষকের লাভের অঙ্ক বাড়বে। কৃষকরা বলছেন, মূলত বেড পদ্ধতিতে ধান ভালো হয় আমন মৌসুমে। আর শূন্য চাষ বা বিনা চাষ বোরো মৌসুমের জন্য ভালো। এই দুই পদ্ধতিতে চাষে প্রচলিত পদ্ধতির মতো ধানের আগে একটি এবং পরে একটি করে ফসল তোলা যাচ্ছে। এই দুই পদ্ধতিতে ধানের ফলনও ভালো।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বিজয়নগরে বিনা চাষে এবং বেড পদ্ধতিতে এবার ধান চাষ করেছেন কৃষক সাব্বির হোসেন। তিনি জানান, বেড পদ্ধতিতে তিনি বেড প্লান্টার মেশিনের সাহায্যে জমিতে একটি মাত্র চাষ দিয়েছেন। এরপর জমিতে পানি সেচ দিয়েছেন। এর তিন থেকে চার দিন পর জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন। এতে তার চাষের খরচ বেচেছে। এক সেচেই ধানের চারা রোপণ করা গেছে।

অন্যদিকে বিনা চাষে ধান আবাদের জন্য জমিতে চাষের প্রয়োজন পড়ে না। চারা রোপণের সাত দিন আগে জমিতে আগাছানাশক দিয়েছেন। এর তিন দিন পর দিয়েছেন সেচ। এর ফলে মাটি নরম হয়ে গেছে। সেচ দেওয়ার দুই দিন পর নরম মাটিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক প্রধান ড. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চল খরা প্রবণ। এই অঞ্চলে সেচের পানির ঘাটতি আছে। কেবল পানির অভাবে আমন মৌসুমে ৭৫ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। এই জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হলে অতিরিক্ত প্রায় ৩০ টন ফসল ফলানো সম্ভব।

 

ক্লাইমেট স্মার্ট কনজারভেশন বা জলবায়ু সুসামঞ্জস্য কৃষি প্রযুক্তি প্রসঙ্গে এই গবেষক বলেন, এই প্রযুক্তির লক্ষ্য জমিতে কম চাষ দেওয়া। যাতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা হয়। শস্য পর্যায় থাকতে হবে। অন্তত তিনটা ফসল চাষ করতে হবে। এতে ফসলের নিবিড়তা বাড়বে। জমিতে খড় বা নাড়া রাখতে হবে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়বে। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম জানান, জমি উৎপাদনমুখী করে রাখতে হবে। বারবার জমি চাষ এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। এ ক্ষেত্রে সমাধান বিনা চাষে ফসল উৎপাদন। এই প্রক্রিয়াটি কৃষকরা গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি গোদাগাড়ীর বিজয়নগর ও পবার খোলাবোনা এলাকার ধানখেত ঘুরে গেছেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক সিনিয়র স্পেশালিস্ট ড. মনোয়ার করিম খান। তিনি বলেন, বিনা চাষে কী করে ফসল উৎপাদন করা যায়, ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো যায়, আমরা সেটি দেখতে এসেছি। আগে আমরা শুনতান বিনা চাষে অন্য ফসল হচ্ছে। কিন্তু বিনা চাষে ধান উৎপাদনের কথা কখনো শুনিনি। এবারই প্রথম স্বচক্ষে তা দেখলাম।

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ





















-->