• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ দুপুর ০২:৫৭:৪৬ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

চা-শ্রমিকদের আন্দোলন ও ইসলামে শ্রমিকের অধিকার


বৃহঃস্পতিবার ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২২ ভোর ০৫:১৯



চা-শ্রমিকদের আন্দোলন ও ইসলামে শ্রমিকের অধিকার

প্রতীকী ছবি

ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ চা হাতে শুরু হয় আমাদের দিন। চা পান করে দৈনিক পত্রিকা পড়ি বা কোরআন তেলাওয়াত করি। কখনও কর্মক্লান্ত হলে শরীরে বাড়তি এনার্জির জন্য বা বন্ধুদের সাথে আড্ডায়ও চলে চায়ের আয়োজন। রাস্তার পাশে, পার্কে, বিনোদন স্পটে, অফিস আদালত, কর্পোরেট সংস্থা থেকে নিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও প্রতিটি স্থানে প্রতিদিন প্রয়োজন পড়ে চায়ের। কিন্তু যাদের শ্রম ও ঘামে আমরা মহান আল্লাহর এই দারুণ পানীয় গ্রহণ করি, এক জীবনে হয়ত তাদের কথা ভাবার ফুরসত হয় না। কয়েকশ বছর ধরেই আমাদের দেশে চায়ের উৎপাদন চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা গড়ে উঠেছে চা পাতাকে কেন্দ্র করে। একটি কুঁড়ি দুটি পাতা আমাদের মনপ্রাণ যেভাবে সজীব ও স্পন্দিত করে অন্য কোনো পানীয় সেভাবে সজীবতা আনতে পারে না। গত ১৪ আগস্ট থেকে চা পাতা শ্রমিকদের আন্দোলন এই প্রথম আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়ে গেল যেন। আমরা জানতে পারলাম, যাদের রক্ত পানি করা শ্রমে আমরা অনন্য স্বাদ ও গন্ধের চা মুখে তুলি তাদের সারাদিনের দুঃসহ খাটুনির মূল্য মাত্র ১২০ টাকা। চা পল্লিতে তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানবেতর জীবনযাপন করে যাচ্ছে। এই আধুনিক যুগেও তারা পড়ে আছে আদিম দাসত্বের নিগড়ে বন্দি হয়ে।

দেশের আর দশজন নাগরিকের মত নেই তাদের মৌলিক কোনো অধিকার। আমরা যে এত ইসলামের কথা বলি, আমাদের দেশে ইসলামি মূল্যবোধগুলো এভাবে বিনষ্ট হতে দেখি তাতে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা হয় না। চা শ্রমিকরা মাত্র তিনশ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলন করছে, একবার ভেবে দেখেছেন, কত কম তাদের চাওয়া? কত স্বল্পতে তারা তুষ্ট? এখানেও অনেকে পাচ্ছে ষড়যন্ত্রের গন্ধ। অনেকেই মন্তব্য করছেন, চা শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য এই আন্দোলন দাঁড় করানো হয়েছে। সত্যি দুঃখজনক, লাখ লাখ শ্রমিককে বছরের পর বছর গোলামের মত খাটিয়ে যদি এই শিল্প দাঁড় করিয়ে রাখতে হয় তাহলে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।


প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আছে সুস্থ সুন্দরভাবে বাঁচার। ইসলাম সাম্যের কথা বলে, অধিকারের কথা বলে। স্বাধীন মানুষকে দাস বানিয়ে রাখা ইসলামে কোনোভাবেই সমর্থিত নয়। আজ থেকে ১৪শ’ বছর আগে প্রিয় নবীর একান্ত ঘনিষ্ঠ সাহাবি ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর তার ঐতিহাসিক উক্তিটি করেছিলেন, কবে থেকে তোমরা মানুষকে দাস বানিয়ে রাখা শুরু করলে, অথচ তাদের মায়েরা তাদেরকে স্বাধীনভাবেই প্রসব করেছে। জন্মেছে স্বাধীনভাবে, এই স্বাধীনতা তার মৌলিক অধিকার। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থান প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার, ইসলামে এই মৌলিক অধিকার রক্ষার নির্দেশ রয়েছে। চা শ্রমিকরা অধিকাংশই হিন্দু বা খৃস্টান, এ জন্যই কি আমাদের এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই? অথচ মৌলিক অধিকার কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, মুসলিম অমুসলিম ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের এই সুরক্ষা অধিকার রয়েছে।


নিপীড়িত মানুষের বন্ধু ইসলাম। পৃথিবীর আর কোনো মতাদর্শ এর চেয়ে বেশি সম্মান দেয়নি দিনমজুরদের। মালিক ও মজুরে কোনো তফাৎ নেই ইসলামে। মালিকের যেমন সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার আছে মজুরেরও আছে স্বাধীন সত্ত্বা লাভের অধিকার। শোষণ ও নিপীড়নের পথ বন্ধ করতে চায় ইসলাম। দুর্বলকে পিষে খতম করার জঘন্য প্রবণতা দূর করতে চায় ইসলাম।

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ





















-->