বাংলাদেশে পথশিশুদের সংখ্যা কত, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে বিভিন্ন সংস্থা ও গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ পথশিশু রয়েছে; যার প্রায় অর্ধেকেরই বাস জাদুর শহর, রঙের শহর ঢাকায়।
কোনো সমস্যার টেকসই সমাধান করতে হলে সেই সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে হয়। সমস্যাটিকে `কী, কেন, কীভাবে' প্রশ্নগুলো করতে হয়। তারপরই সমস্যাটির প্রকৃত রূপ বেরিয়ে আসে, সমাধানের একটা পথও পাওয়া যায় তখন। `পথশিশু তৈরি হয় কেন'- এমন প্রশ্ন করলে মোটা দাগে যে উত্তরটা পাওয়া যায় তা হলো: পথশিশুদের বড় একটি অংশ আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। দারিদ্র্যই মূল কারণ। এছাড়া বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ কিংবা একাধিক বিয়ে, তাদের মৃত্যু, পারিবারিক কলহ, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, নদীভাঙন, হারিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শিশুরা পরিণত হয় পথশিশুতে।
এই পথশিশুরা কেমন আছে? তারা ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। মানুষের উচ্ছিষ্ট খেয়ে তারা জীবন কাটায়। তাদের নির্দিষ্ট কোনো আবাস নেই। খোলা আকাশ, পার্ক, ফুটপাত, রেলস্টেশন, ফেরিঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল কিংবা বাসস্টেশনই তাদের বাড়ি। পথশিশুদের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ২০১৬ সালে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ)।
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু প্রতিদিন গোসলহীন থাকে, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থতায় ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না। একই গবেষণায় বলা হয়, ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকে। এদের মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশু স্থান পরিবর্তন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে আর ৩৩ শতাংশ পাহারাদারের কারণে। খোলা আকাশের নীচে ঘুমানোর পরও তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ শিশুকে মাসিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা মাস্তানদের দিতে হয়। তারা পুলিশি নির্যাতন এবং গ্রেপ্তারেরও শিকার হয়।
মন্তব্য করুনঃ