শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতু যাওয়ার পথে দুটি সেতু আছে। প্রেমতলা ও কাজীরহাট সেতু নামে পরিচিত এই সেতু দুটির বয়স ৩১ বছর। পুরোনো হওয়ায় সেতু দুটির অবস্থা বেশ নাজুক। যানবাহন উঠলে দুলুনি শুরু হয়। অন্যদিকে সেতু দুটি অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় দুই প্রান্তে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে নতুন করে দুটি সেতু নির্মাণ করতে সরকার থেকে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল দুই বছর আগে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের কথা বলে সেতু দুটির নির্মাণকাজ এখন বন্ধ হয়ে আছে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পুরোনো সেতু দুটি পার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকেরা।
ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে চলাচল করা শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের চালক দেলোয়ার হোসেন বলছিলেন, ‘প্রেমতলা সেতুটিতে গাড়ি উঠলেই দুলতে থাকে। তখন আমাদের ভয় লাগে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি।
নতুন দুটি সেতুর কাজ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রেমতলা সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। আর কাজীরহাট সেতুটি সরু। প্রকল্প অনুমোদিত হলেও নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণপ্রক্রিয়া এখনো শেষ করা যায়নি। এ কারণে নির্মাণকাজ আটকে আছে।
সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক। আগে সড়কটি ব্যবহার করে ওই এলাকার মানুষ পদ্মার ঘাটে এসে নদী পারাপার হয়ে ঢাকায় যেত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই সড়ক দিয়েই ঢাকামুখী যানবাহনগুলো চলাচল করছে। ১৯৯১ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীতে ১১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থের প্রেমতলা সেতু ও একই নদীতে জাজিরা এলাকায় ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থের কাজীরহাট সেতু নির্মাণ করে। দীর্ঘ ৩১ বছরে সেতু দুটির অবস্থা নাজুক হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টির পাশাপাশি সেতুর মেঝে ও রেলিং থেকে রড বেরিয়ে গেছে। প্রেমতলা সেতুতে যানবাহন উঠলে সেতু দুলতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে শরীয়তপুর সওজ বিভাগ ভারী যানবাহন নিয়ে সেতুতে না ওঠার আহ্বান জানিয়ে দুই প্রান্তে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে।
শরীয়তপুর-পদ্মা সেতু সড়কটি চার লেনে উন্নীত করতে ২০২০ সালে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। প্রকল্পের আওতায় প্রেমতলায় ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের সেতু এবং কাজীরহাটে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয় সওজ। ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই দুটি সেতু নির্মাণ করার জন্য গত বছরের ১ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয় জামিল ইকবাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন সেতু দুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ধীরগতিতে কাজ করছে। প্রেমতলা ও কাজীরহাটে সেতুর একটি করে পিলার বানানো হয়েছে। এরপর ওই সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ আছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবালের প্রকল্প প্রকৌশলী মো. হাসান আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার জন্য সেতু দুটির কাজ বন্ধ আছে। নদীর অংশের কিছু কাজ তাঁরা করেছেন। কিন্তু সংযোগ সড়কের অংশে স্থানীয় লোকজন জমির অধিগ্রহণের টাকা বুঝে না পাওয়ায় কাজ করতে দিচ্ছে না।
নড়িয়ার নশাসন এলাকার বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন বলেন, দিনে তিন-চারবার সেতু দিয়ে পারাপার হন তিনি। সেতুর বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে সবাইকে। সেতুতে উঠলেই যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন।
জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। অনেকগুলো ধাপ পার করে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করতে হয়। এ জন্য একটু দেরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭ ধারার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ৮ ধারার নোটিশ দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করে জমি সওজকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুনঃ