মফস্বল ডেস্ক :
টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের পানিতে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের মুহুরী নদীর তিনটি স্থানে বাঁধের ভাঙনে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি স্থান হচ্ছে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাঁধ ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অপরিকল্পিত কাজকে দুষছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় বাঁধের ওপরেই স্থাপন করা হয়েছে মুহুরী সেচ প্রকল্পের প্রিপেইড স্কিমের ঘর ও জলাধার। সেচের পানির জন্য বাঁধ ভেদ করে পাইপ বসানো হয়েছে নদীতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত এই স্কিমের কারণে বাধেঁর এই স্থানটি দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে পানির প্রবল চাপে সেখানে বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে করে স্কিমের ঘর ও জলধারটি প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভাঙন স্থান দিয়ে প্রবল বেগে আশপাশের গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমির আবাদ, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় মানুষজন।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের কৃষক নুরুল আমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'ঢল আইবো আর যাইবো, লাভ অইবো হেতেরগো। আন্ডা মইদ্দে হড়ি পিষি যাইয়ের। হগগল জিনিসের দাম বেশি, আন্ডা দাম কমি গেছে'।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উজ্জ্বল বণিক জানান, এই বন্যায় ৪৫ হেক্টর আয়তনের ৯৫টি পুকুরের ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে মুহুরী সেচ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের (আইএমইপি) উপ মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোন সংযোগটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) আরিফুর রহমান ভূঞা জানান, স্কিমটি দুই বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে বাঁধের অন্যান্য স্থানেও ভেঙেছে। এখানে কেন ভেঙেছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে পানির প্রবল চাপ রয়েছে। ফলে বাঁধের যেকোনো স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. রাশেদ শাহরিয়ার জানান, আগামী বছরের নতুন বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফুলগাজী-পরশুরামে বন্যা নিয়ন্ত্রণে টেকসই মুহুরী বাঁধ নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরামর্শক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে পরামর্শকদের প্রতিবেদনের খসড়া পাওয়ার কথা রয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থ ও কর্মপরিকল্পনা নিশ্চিত হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টেকসই মুহুরী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, নির্মাণ কাজ শুরু হলে কাজ শেষ হতে ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগতে পারে।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পরামর্শক নিয়োগের জন্য নিয়মতান্ত্রিক কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে।
ইতোপূর্বে ৭৩১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ওই প্রকল্পের কাজের সূত্র ধরেই পরামর্শক দল নিয়োগের কাজটি হয়েছে। পরামর্শ দল জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টিকে বিবেচনায় এনে মুহুরী ও কহুয়া নদীর সম্ভাব্য ভাঙন এলাকা, ভবিষ্যতে নদীতে পানি প্রবাহ বাড়ার সম্ভাব্যতা ইত্যাদি বিবেচনায় এনে একটি মডেল তৈরি করবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম ফুলগাজী বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাবিত ৭৩১ কোটি টাকা প্রকল্পের আশ্বাস দিয়েছিলেন। উক্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। শর্তগুলো প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- ৪০ কিলোমিটার নদী খনন, ৭৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, ১২ কিলোমিটার জুড়ে ব্লক স্থাপন, ফ্লাড বাইপাস এবং ৯৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ। এ প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ খরচ হবে জমি অধিগ্রহণে।
মন্তব্য করুনঃ