• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বিকাল ০৩:০২:০৭ (21-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

ঘর-বাড়ি ভেঙে অন্যের বাড়িতে রাখছি, তোলার মতো জায়গা পাচ্ছি না


বুধবার ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ০৯:৫৭



ঘর-বাড়ি ভেঙে অন্যের বাড়িতে রাখছি, তোলার মতো জায়গা পাচ্ছি না

ঘর-বাড়ি ভেঙে অন্যের বাড়িতে রাখছি, তোলার মতো জায়গা পাচ্ছি না

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের সর্দার কান্দি ও শম্ভু হালদার কান্দি গ্রামে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পদ্মার শাখা নদীর ভাঙনে কয়েক দিনে বিলীন হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক বসতভিটা। যে যেভাবে পারছে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে ঘর তোলার মতো জায়গা পাচ্ছেন না তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার শাখা নদীতে তীব্র স্রোত বইছে। স্রোতে বিলীন হচ্ছে মানুষের বাড়ি-ঘর। মানুষ ঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সর্দারকান্দি সড়কের দুপাশে ভেঙে রাখা হয়েছে অসংখ্য ঘর।

এদিকে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় হুমকিতে রয়েছে বাংলাবাজার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় প্রতি বছর বর্ষা শুরু হলে পদ্মা নদীর ভয়াল থাবায় নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এ ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। এবার ভাঙনের তীব্রতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

নদীভাঙনের শিকার ইমরান হোসেন বলেন, এই অঞ্চলে দুই মাস ধরে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ১৫ দিন ধরে তীব্র আকার ধারণ করছে। রাত-দিনে ঘর ভেঙে সরাতে পারছে না মানুষ। ঘর-বাড়ি ভেঙে রাখবে কোথায়? রাখার মতো জায়গা নেই। মানুষের হাত-পা ধরে অন্য মানুষের বাড়িতে আমার ঘর ভেঙে রেখে আসছি। তুলব কোথায়? জায়গা পাচ্ছি না। টাকা নেই। ঘর-বাড়ি ভাঙতে সব খরচ হয়ে গেছে। এখন তোলার মতো জমিও নাই, টাকাও নাই।

মাকসুদা বেগম বলেন, আমার ছেলে মাসুদ কৃষি কাজ করে। অনেক কষ্টে একটা বিল্ডিং তুলছিল। কিন্তু বিল্ডিংটা নদীতে ভাঙ্গা লইয়া গেল। এখন আমরা কোথায় যাই? রাতে মানুষের বাড়িতে গিয়ে থাকি। দিনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। সরকার যদি আমাদের একটু সাহায্য করতেন, খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারতাম।

মায়া বেগম বলেন, ৪-৫ দিন আগে আমার বসতঘর সরিয়ে নিয়েছি। খুব শখ করে অনেকগুলো মুরগি পালতাম। মুরগির খোয়ারটা এখানেই ছিল। আজ মুরগি আর খোয়ার দুইটাই বিক্রি করে গেলাম‌। নিজেদের থাকারই তো জায়গা নাই, মুরগি পালব কোথায়? ঘর ভেঙে নিয়ে অন্য স্থানে রাখছি। ভিটাটার মায়া ছাড়তে পারি না। রান্না-বান্না করি না। ভিটায় এসে বসে থাকি।

আলী মিয়া সৈয়াল বলেন, এই পর্যন্ত আমাদের সর্দার কান্দি ও শম্ভু হালদার কান্দি গ্রামের দুইশ ভিটেবাড়ি নদীতে ভাঙ্গা লইয়া গেছে। গত কয়েক দিনে মোখলেছ, তাইজুল ইসলাম, হাতেম সৈয়াল, কাজল সৈয়াল, সাইফুল, আলেয়া, ইমরান আশরাফ উদ্দিন, রাজাউল্লাহ, আল আমিন, বিল্লাল ফকির, জসীম উদ্দীন, নান্নু, আমিন, মোবারক, রাজ্জাক সরদার, সোলায়মান, কালু সৈয়াল, আবু কালাম, পাখি সৈয়াল, শাহিন খান, আজিজ, মজিদ সৈয়াল, রেজাউল্লাহ, নয়া মিয়া, হরিছ সৈয়াল, চম্পা বেগম, নাসির মাঝি, বাবুল মাঝির বসতভিটা নদী ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। মানুষগুলো ঘরবাড়ি হারাইয়া এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।

 

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী  বলেন আমরা বেশ কয়েকবার ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। শুকনো মৌসুমে ওই স্থানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এখন যেহেতু ওই এলাকায় তীব্র নদী ভাঙছে, জিও ব্যাগভর্তি বালুর বস্তা ফেলানো যায় কি না মিটিংয়ে এ বিষয়ে কথা বলব।

 

নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, শিগগিরই নদীভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বসতভিটা, ফসলি জমি রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার বিষয়ে কথা বলব। সেই সঙ্গে পদ্মার মাঝ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুসাইন মুহাম্মদ আল জুনায়েদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য আমরা শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছি। শিগগিরই তালিকা প্রকাশ করে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।

মন্তব্য করুনঃ


সর্বশেষ সংবাদ





















-->