বৈশ্বিক নানা জটিলতায় রফতানি পণ্য পরিবহনে কনটেইনার সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। বাড়তি ভাড়া দিয়েও শিপিং লাইনগুলো ৪০ ফুটের খালি কনটেইনার সরবরাহ করতে পারছে না। লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে মধ্যপ্রাচ্যের বন্দরগুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় সিঙ্গাপুর-কলম্বোসহ এশিয়ার বন্দরগুলোতে আটকে আছে জাহাজের পাশাপাশি হাজার হাজার কনটেইনার। এ অবস্থায় ইউরোপ-আমেরিকায় রফতানি পণ্য পাঠাতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
গত আট মাসের বেশি সময় ধরে লোহিত সাগরে চলাচলরত ইহুদি মালিকানাধীন জাহাজে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে হুতি বিদ্রোহীরা। এ অবস্থায় ইউরোপ-আমেরিকাগামী জাহাজগুলো রুট পরিবর্তন করায় আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও সৌদি আরবসহ আশপাশের বন্দরগুলোতে জাহাজ ভেড়ানো অনেকটা কমে গেছে। বিকল্প ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হিসাবে চাপ বেড়ে গেছে এশিয়াভিত্তিক সিঙ্গাপুর- শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার বন্দরগুলোর ওপর।
এমএসসির হেড অব অপারেশেন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের যে বন্দরগুলো ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে ব্যবহার হতো, সেগুলোতে এখন জাহাজ ভেড়ানো অনেকটা কমে গেছে। সেই চাপ এখন এসে পড়ছে এশিয়ার বন্দরগুলোর ওপর।’
শিপিং ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, আগে সিঙ্গাপুর কিংবা এশিয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোতে কোনো রকম সময়ক্ষেপণ ছাড়াই বার্থিং সুযোগ পেতো ইউরোপ-আমেরিকাগামী জাহাজগুলো। বর্তমানে প্রতিটি জাহাজকে বার্থিং পেতে সময় লাগছে ৩ থেকে ৭ দিন। এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে খালি কনটেইনার মুভমেন্ট গতি একেবারেই কমে গেছে। ফলে বাংলাদেশে রফতানি পণ্য পরিবহনের কনটেইনার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, রুট পরিবর্তনের কারণে জাহাজগুলোর কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে। পাশপাশি জাহাজগুলোকে বার্থিং পেতে সময় লাগছে বেশি। এতে পণ্য পরিবহনের কনটেইনার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
একদিকে চীনে রফতানির চেয়ে আমদানি তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সেখানে যেমন খালি কনটেইনার বেশি চলে গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকায় রফতানি বেশি হলেও খালি কনটেইনার মিলছে না। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন দেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। গত এক মাসে ইউরোপ এবং আমেরিকাগামী ৪০ ফুট সাইজের প্রতিটি কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে ৫০০ থেকে দেড় হাজার মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের পণ্য শিপিং এজেন্টদের কাছ পাঠানো হলেও কনটেইনারে অভাবে পণ্য জাহাজে লোড করা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে পণ্যগুলো বায়ারদের কাছে দেরিতে পৌঁছাচ্ছে। এতে বাড়ছে খরচও।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে রফতানি পণ্য পাঠাতে প্রতি মাসে ৭০ হাজার খালি কনটেইনারের প্রয়োজন। এর মধ্যে অন্তত ৬৫ হাজার কনটেইনার হলো ৪০ ফুট সাইজের।
ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে গত কয়েকমাস আগেও বাংলাদেশ ছিল খালি কনটেইনার রাখার ডাম্পিং স্টেশন। কিন্তু এখন পণ্য রফতানির জন্য খালি কনটেইনারের চাহিদা বাড়ছে, তখনই কনটেইনার সরবরাহ করতে ব্যর্থ বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলো। তবে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যকে সচল রাখার জন্য দ্রুত খালি কনটেইনার সরবরাহ করার কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্য করুনঃ