চ্যানেল এস ডেস্ক:
লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতিদের একের পর এক জাহাজে হামলার ঘটনায় প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে। ঝুঁকি এড়াতে বিশ্বের বড় বড় জাহাজ কোম্পানি বর্তমানে এ রুট পরিবর্তন করে ভিন্ন রুট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে সময় বেশি লাগছে, বেড়ে যাচ্ছে ব্যয়ও। সুয়েজ চ্যানেল ব্যবহার করতে না পারায় বর্তমানে বাংলাদেশ-ইউরোপ রুটে ২২ দিন অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে। এতে জাহাজ ভাড়া খরচ প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যয়ের চেয়েও ভয়াবহ হলো অতিরিক্ত ২২ দিন সময়ক্ষেপণ। কারণ, এতে পণ্যবাহী বড় জাহাজের (মাদার ভেসেল) শিডিউলে বিপর্যয় ঘটছে।
এ পরিস্থিতি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, সুয়েজ খাল ব্যবহার করে এ অঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়। বর্তমানে ভিন্ন রুট ঘুরে আসার কারণে জাহাজের ভাড়া ও সময় বেড়ে গেছে। লোকসান কমাতে জাহাজ মালিকরা এরই মধ্যে ৪৫ শতাংশ সারচার্জ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
দেশের আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, লোহিত সাগরে উত্তেজনায় রুট পরিবর্তনের কারণে জাহাজের জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে। এরই মধ্যে কনটেইনার ভাড়া ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাড়তি খরচের চাপ পড়বে পণ্যের দামেও। বড় সমস্যা হচ্ছে, কাঙ্ক্ষিত সময়ে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আগামীতে কনটেইনার সংকটও দেখা দিতে পারে।
দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্পে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল। তিনি বলেন, বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি পোশাকের রপ্তানি সবচেয়ে বেশি। লোহিত সাগর হয়ে এতদিন রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু লোহিত সাগরের চলমান উত্তেজনার প্রভাবে এরই মধ্যে জাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে। কনটেইনার ভাড়া ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। রপ্তানিতে খরচও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের পোশাক ক্রেতারা বিষয়টি কীভাবে নিচ্ছে, সেটার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। এ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এটা দীর্ঘায়িত হলে কনটেইনার সংকটও দেখা দিতে পারে। যেটা করোনাকালে ঘটেছিল।
এরই মধ্যে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় বেড়ে গেছে বলে জানান দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমদানিতে আমাদের যেখানে ৬০০ ডলার খরচ হতো, সেখানে এখন ৩ হাজার ডলার হয়ে গেছে। এমনটা চলতে থাকলে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সার্বিক ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ জুটপণ্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান এস আহমেদ মজুমদার বলেন, এমনিতেই পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ধুঁকছে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতাও অনেক। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে টিকে থাকতে বেগ পেতে হচ্ছে। লোহিত সাগরের উত্তেজনায় ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে পণ্য পাঠাতে জাহাজ ভাড়াসহ রপ্তানি ব্যয় বেড়েছে। এতে বাড়তি চাপে পড়তে হচ্ছে আমাদের। আফ্রিকার দেশগুলোতে পণ্য পাঠাতে এ রুট ব্যবহার হয় না। কিন্তু সেখানেও জাহাজ ভাড়া বাড়ছে।
মন্তব্য করুনঃ