নারায়ণগঞ্জে অনেক এলাকায় কয়েক মাস ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকেরা। বাসাবাড়িতে চুলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন এলপিজি সিলিন্ডার। এতে সংসারে খরচ বাড়ছে। এ ছাড়া গ্যাস–সংকটের কারণে শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সদরের দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ মার্জিয়া রহমান বলেন, গ্যাসের সংকটের কারণে চুলায় রান্নার কাজ সারা যায় না। দিনভর গ্যাস থাকে না। রাতে গ্যাসের চাপ একটু থাকলেও সেটি ভোর হলেই চলে যায়। কত দিন এই সমস্যা থাকবে, কেউ জানে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্যাসের সংকট চলছে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ সস্তাপুর, সস্তাপুর, কাঠেরপুল, শহরের টানবাজার সাহাপাড়া, বাবুরাইল, পাইকপাড়া, ভূঁইয়াপাড়া, নয়াপাড়া, জল্লারপাড়, শীতলক্ষ্যা, তামাকপট্টি, নলুয়া, বাবুরাইল দেওভোগ, নিমতলা, সুতার পাড়া, মন্ডলপাড়া, টানবাজার, কালিরবাজার, পালপাড়া, দেওভোগ, কাশিপুর, গলাচিপা, নন্দীপাড়া, গোয়ালপাড়া, কলেজ রোড, জামতলা, মাসদাইর, গাবতলী, উত্তর চাষাঢ়া, চাঁদমারী, মিশনপাড়া, আমলাপাড়া, ডনচেম্বার, ব্যাংক কলোনি, খানপুর, তল্লা, পাঠানতলী, হাজীগঞ্জসহ প্রভৃতি এলাকায় আবাসিক গ্রাহকেরা গ্যাসের সংকটে ভুগছেন। এসব বাসিন্দার সিলিন্ডার ও লাকড়ির চুলায় রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ মোহসীনা আক্তার বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাত আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে একটু গ্যাস আসে। আবার ফজরের আগে চলে যায়। সারা দিন চুলায় গ্যাস থাকে না। তাই সিলিন্ডার কিনে সেটি দিয়ে রান্না করতে হচ্ছে। প্রতি মাসে দুই–তিনটা সিলিন্ডার প্রয়োজন পড়ে। গ্যাস–সংকটের কারণে অনেককে মাটির চুলায় রান্নায় করতে হচ্ছে।
সরবরাহ কম থাকায় গ্যাসের এমন সংকট চলছে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এ সংকটে নিরসনের জন্য গত বুধবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ডিও লেটার (আধা সরকারিপত্র) দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা, সেই পরিমাণ গ্যাস আমরা পাচ্ছি না। সরবরাহ না থাকায় গ্যাসের এই সংকট। আমরা আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হতে পারে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান গ্যাস–সংকট সমাধানের বিষয়ে একটি ডিও লেটার পাঠিয়েছিলেন। এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চবটিতে অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরী, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত আদমজী ইপিজেড, বন্দর, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে শিল্পকারখানাগুলোয় গ্যাসের সংকট চলছে। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। ফলে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা, স্পিনিং, টেক্সটাইল, রি-রোলিং মিলসহ শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা না হলে রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নামার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। শিল্পকারখানা চলতে হলে ন্যূনতম গ্যাসের চাপ ৬ পিএসআই লাগে। সেটি কমে এখন ১ থেকে ২–এ নেমে এসেছে।
আড়াইহাজারে অবস্থিত ফকির ফ্যাশন লিমিটেড ডাইংয়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ টন মাল উৎপাদন হতো। কিন্তু গ্যাস–সংকট ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ৩০ থেকে ৩৫ টনে নেমে এসেছে। কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান নাহিদ বলেন, এমনিতেই বায়ারদের থেকে অর্ডার অনেক কমে গেছে। গ্যাসের চাপ পিএসআই এক থেকে দুই আছে। শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
উৎপাদনধসের কথা জানান ফতুল্লা ডাইং ও ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে এহসান। তিনি বলেন, ‘গ্যাস–সংকটের কারণে আমাদের দুটি কারখানায় উৎপাদন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। কীভাবে এই সংকটের সমাধান হবে, তা আমরা জানি না।’
গ্যাস–সংকট এভাবে চলতে থাকলে রপ্তানি আয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে জানিয়েছেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নেতারা। সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে শিডিউল চাই, তারা দিনের কোন সময়ে গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে। সেই অনুযায়ী আমরা কারখানা খুলব। এই সংকটের কারণে মালিক- শ্রমিকদের পাশাপাশি উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হবে।’
মন্তব্য করুনঃ