চ্যানেল এস ডেস্ক:
মাদারীপুরে কিস্তির টাকা পরিশোধে চাপ প্রয়োগ করায় লজ্জায় বিষপানে হালিমা বেগম নামে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
স্বজনদের অভিযোগ, কিস্তির টাকা পরিশোধে চাপ প্রয়োগ করায় লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন হালিমা। এনজিওর এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করলেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
স্বজনরা জানান, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বেসরকারি এনজিও বিজ-এর মাদারীপুরের রাজৈর শাখা থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন হালিমা বেগম। প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ টাকা করে কিস্তি দেয়ার কথা। গত বুধবার ২৮ নম্বর কিস্তির টাকা চাইতে বাড়িতে যান প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন। টাকা দিতে না পারায় অকথ্য ভাষায় পরিবারের সবাইকে গালিগালাজ করেন তারা। একপর্যায়ে গোয়াল থেকে গরু বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এনজিওর মাঠকর্মীরা। বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হন সাইফুলসহ সঙ্গে থাকা লোকজন। পাওনা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে এক দিন সময় দেন তারা। তা না হলে বিষ খেয়ে হালিমাকে মরতে বলেন বিজ-এর কর্মকর্তারা। প্রতিবেশীর সামনে এমন অপমান সইতে না পেরে বুধবার রাতে বিষপান করেন হালিমা। গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেলে। শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হালিমা।
হালিমা বেগমের মেয়ে সুখী আক্তার বলেন, ‘আম্মু ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। সপ্তাহে ১৫০০ টাকার কিস্তি। বেশির ভাগ কিস্তি শেষ হয়েছে। আমাদের সঞ্চয়ের অনেক টাকা জমাও আছে। বুধবার সাইফুলসহ কয়েকজন বাড়িতে আসে, মা বলেছে এই সপ্তাহ টাকা দিতে পারব না। পরের সপ্তাহে একসঙ্গে দুটি কিস্তি দেব। কিন্তু আম্মুর কথা শোনেনি। অকথ্য ভাষায় গালিগালজ করে, পরে গোয়ালঘর থেকে গরু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিজ-এর লোকজন। যাওয়ার সময় আম্মুকে বিষ কিনে মরে যেতে বলে তারা। আম্মু অপমান সইতে না পেরে বিষ খায়। এ ঘটনার বিচার চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা জগলুল শেখ বলেন, প্রথমে মিষ্টি কথা বলে ঋণ দেয়। পরে কিস্তির টাকার জন্য চাপ দেয় কর্মকর্তারা। এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তা না হলে এজিওকর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
এদিকে এনজিওর অফিসে গিয়ে কোনো কর্মকর্তাকে না পাওয়া গেলেও অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম মোবাইলে চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ঋণের কারণেই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন হালিমা।
মাদারীপুরের রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার ঘোষ জানান, নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিহত হালিমা বেগম রাজৈর উপজেলার নরারকান্দি গ্রামের জব্বার মোড়লের স্ত্রী। সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তার। ৬০ হাজার টাকা নেয়া ঋণ সুদসহ ৬৭ হাজার ৬২০ টাকা পরিশোধের শেষ তারিখ ছিল ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি। এখন পর্যন্ত ২৭ কিস্তিতে ৪০ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুনঃ