• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ৭ই বৈশাখ ১৪৩১ বিকাল ০৪:১১:২৩ (20-Apr-2024)
  • - ৩৩° সে:

স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু যেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে


রবিবার ১৩ই নভেম্বর ২০২২ দুপুর ১২:০৬



স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু  যেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে

ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের চেয়ে মারাত্মক, নাকি ক্যানসারের প্রতিদ্বন্দ্বী? কার্বন নির্গমন কমাতে যদি বিশ্ব দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে তা জানার চেষ্টা করছেন গবেষকরা।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানব সভ্যতা বড় ধরনের স্বাস্থ্য হুমকির মুখোমুখি উল্লেখ করে, মিশরে চলমান কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনে বিষয়টিকে ‘সামনে’ এবং ‘কেন্দ্রে’ রাখার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।  

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সামগ্রিক প্রভাব পরিমাপ করা একটি অত্যন্ত জটিল কাজ। বৈশ্বিক উষ্ণতা, ক্রমবর্ধমান তাপ এবং আবহাওয়ার তাৎক্ষণিক বিপদ থেকে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য ও পানির ঘাটতি, বায়ু দূষণ এবং রোগের কারণে স্বাস্থ্যকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।

ডব্লিউএইচও’র আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে দাবদাহের পাশাপাশি অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়ায় প্রতিবছর আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। 

গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্সের নীতিনির্ধারক জেস বিগলির মতে, ডব্লিউএইচও’র এই হিসাবকে একটি অনুমান বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক হুমকি। পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা মানব স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি দেখতে যাচ্ছি।’

জাতিসংঘের জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আইপিসিসির চলতি বছরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ এমন সব রোগের কারণে হয়, যার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা দায়ী। আগামীতে যা আরও খারাপ হতে পারে।

অতিরিক্ত মৃত্যু?

এমন আশঙ্কার আরেকটি বড় কারণ খাদ্য ঘাটতি। গত মাসে দ্য ল্যানসেট কাউন্টডাউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের এক দশকের তুলনায় ২০২০ সালে প্রায় ১০ কোটি মানুষ গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, গত ৫০ বছরে চরম খরা বেড়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, যা লাখ লাখ মানুষকে সুপেয় পানির অভাবের ঝুঁকিতে ফেলেছে। এছাড়া ২০২০ সালে বায়ু দূষণের কারণে ৩৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১২ লাখ মৃত্যু সরাসরি জীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্গে সম্পর্কিত।

গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, উষ্ণ তাপমাত্রা মশার মতো ভাইরাস বহনকারী প্রাণীকে নতুন এলাকায় ঠেলে দিচ্ছে, যা রোগের বিস্তার বাড়িয়ে দিচ্ছে। ল্যানসেট কাউন্টডাউনের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা ১২ শতাংশ বেড়েছে। উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে আফ্রিকার কিছু অংশে ম্যালেরিয়া ১৪ শতাংশ বেড়েছে। 

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি এবং ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট ল্যাব সতর্ক করে বলছে, বিশ্বের কিছু অংশে উষ্ণতা ক্যান্সারের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। যার কারণে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বাড়তে পারে মৃত্যুর হার। 

'বাড়ছে বৈষম্য'

ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট ল্যাবের হান্না হেস বলেন, এসব অনুমান রক্ষণশীলও হতে পারে। কারণ, তারা মৃত্যুহার এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত পূর্ববর্তী তথ্য সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ তাপমাত্রার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাই এখানে ভেক্টর-বাহিত রোগের মতো সম্ভাব্য হুমকি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

এই প্ল্যাটফর্ম বিশ্বব্যাপী ২৪ হাজারের বেশি অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট স্থানীয় অনুমান দিয়েছে, যেখানে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। অদূর ভবিষ্যতে শহরটিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মৃত্যু ক্যানসার থেকেও দ্বিগুণ হতে পারে। এ ধরনের অতিরিক্ত মৃত্যুকে ‘সোশ্যাল কস্ট অব কার্বনে’ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে।

দাতব্য সংস্থা ওয়েলকাম ট্রাস্টের জলবায়ু ও স্বাস্থ্য পরিচালক অ্যালান ডাঙ্গুরের মতে, স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণার জন্য আরও অর্থায়ন প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, ‘যদি আমরা আমাদের চিন্তাধারায় জলবায়ু পরিবর্তনকে যুক্ত না করি, তাহলে আমরা সম্পূর্ণভাবে মূল বিষয়টি মিস করব।’

মন্তব্য করুনঃ