মফস্বল ডেস্ক :
লক্ষ্মীপুরে টানা ৩ দিনের বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্রায় ২ হাজার হেক্টর আমন ধান ও শাক-সবজির খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া কমলনগর ও রামগতি উপজেলার অন্তত ২৫টি গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক ভেঙে গেছে।
এরমধ্যে কমলনগর চর কালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জে একটি রাস্তা ভেঙে জনপদে পানি ঢুকেছে। এতে ১৫ বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। রামগতির চর রমিজ ও চর আবদুল্লাহসহ বিভিন্নস্থানে আরও ৩৫টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর ৮১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। খরার কারণে কৃষকরা পুরোদমে আবাদ করতে পারেননি। এ মাসজুড়ে তারা আবাদ করার আশা করেছিলেন। এদিকে জোয়ারের পানিতে ১ হাজার হেক্টর জমির আমন ও ৬০ হেক্টর জমির সবজি তলিয়ে গেছে। তবে বেসরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ২ হাজার হেক্টর আমন ও শাক-সবজির খেত ডুবে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা ৩ দিনের বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে রামগতি ও কমলনগরের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে। এ জনপদের ৩২ কিলোমিটার উপকূলে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারে আশপাশের বাসিন্দাদের বাড়ি-ঘর ডুবে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার ২৫টি গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক ভেঙে গেছে। এসময় অন্তত ৫০টি বসতঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়।
রামগতির চর রমিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজাহিদুল ইসলাম দিদার বলেন, জোয়ারের কারণে ২ টি পাকা ও ৪টি কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। ৩দিন ধরে মানুষ দুপুর এবং রাতে চুলাতে আগুন দিতে পারেনি। অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে কষ্টের শেষ নেই।
রামগতি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, রামগতিতে বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টরের রোপা আমন ও ২৪৭ হেক্টর জমির বীজতলার আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ১০৫ হেক্টর জমির শাকসবজি পানিতে ডুবে আছে। পানি সরলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, কমলনগরে ৭-৮টি গ্রামীণ রাস্তা ভেঙে গেছে। এরমধ্যে চর কালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ এলাকার একটি রাস্তা ভেঙে জনপদে পানি ঢুকেছে। এতে ১৫-২০টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ১ হাজার ৬০ হেক্টর জমির আমন ফসল ও সবজি নিমজ্জিত হয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়সহ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমনের চারা রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান সাংবাদিকদের বলেন, জোয়ারে গ্রামীণ সড়ক ও ঘরবাড়ি ক্ষতির বিষয়ে ইউএনওরা কাজ করছেন। প্লাবিত হওয়া এলাকার দুইটি আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির যে তালিকা পাওয়া গেছে, তা ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুনঃ