মর্জিনা বেগম হতদরিদ্র। এলাকাবাসীর সহায়তার তাঁর কোনোমতে দিন চলে যায়। এবারের বন্যায় কিছুটা নিরুপায় হয়ে পড়েন তিনি। বন্যার সময় কয়েক দিন এমনও দিন গেছে, শুধু চিড়া খেয়ে ছিলেন।
আরজিনা বেগমের থাকার ঘর ভেঙে গেছে। কিন্তু ঘর মেরামতের সামর্থ্য নেই তাঁর। দিনমজুর স্বামীর বয়স হয়েছে। তিনিও কাজ করতে পারেন না। বন্যার পর আরজিনার পরিবার দিশাহারা।
বন্যা শুরুর প্রায় এক মাস পর গারুহারা গ্রামে গিয়ে জানা গেল এ রকম অনেক ঘটনা। কারও ঘর ভেঙেছে, কারও ফসলহানি হয়েছে। গবাদিপশুও মরে গেছে কয়েকজনের। সব মিলে গ্রামটির মানুষের মন বিষণ্ন।
কুড়িগ্রাম শহর থেকে পূর্বদিকে গারুহারা গ্রামের দূরত্ব ১০–১২ কিলোমিটার। এটি পড়েছে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে। এবারের বন্যায় এই গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট অন্তত দুই সপ্তাহ পানির নিচে তলিয়ে ছিল। এই গ্রাম থেকে বন্যার পানি নামছে ধীরে। কয়েক হাজার মানুষ দুই সপ্তাহ ধরে ভুগছেন জলাবদ্ধতায়।
বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় এখানকার মানুষকে নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। এ কারণে পাশের গ্রামগুলোয় ত্রাণ পৌঁছালেও এই গ্রামে খুব একটা পৌঁছেনি।
প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়। তবে গতকাল শুক্রবার দুপুরে এখানে ত্রাণ নিতে আসতে পড়তে হলো বিড়ম্বনায়। কুড়িগ্রাম–যাত্রাপুর সড়কের শলকুর বাজারে একটি সেতুর কাজ চলায় পাটেশ্বরী–ঘোগাদহ হয়ে ৩০–৩৫ কিলোমিটার ঘুরে আসার পর ত্রাণের পিকআপ ভ্যানকে আবার থামতে হয় পাঁচগাছি ইউনিয়নের জালালের মোড়ে।
বন্যার কারণে রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় ও জলাবদ্ধতার কারণে সেখান থেকে ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে আসা হয় গারুহারা গ্রামে। এই গ্রামের ১০০টি পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এসব খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি আলু, এক কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি লবণ ও এক লিটার সয়াবিন তেল।
গারুহারা গ্রামের পাশের পাঁচগাছি ইউনিয়নের আরাজি কদমতোলা গ্রামের ৫০টি পরিবারের মধ্যেও প্রথম আলো ট্রাস্ট্রের উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার সদস্যরা উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুরে ৫০ পরিবার ও নাগেশ্বরী উপজেলার সাঞ্জুয়ারভিটা ও বামনডাঙ্গার ৫০টি পরিবারের মধ্যেও প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে গারুহারা গ্রামের আন্জু বেগমের সংসার। এবারের কোরবানির ঈদে ছাগল বিক্রি করে ঈদের বাজার করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু বন্যার পানিতে তাঁর সেই ছাগলটির সঙ্গে চারটি মুরগিও মরে গেছে। তিনি এখন মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলেকে কাজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ হাতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘এক দিন পর ঈদ। কিন্তুক হাতে টাকাপয়সা নাই। একবেলা খেয়ে থাকি। নিদানকালে চাল–ডাল পায়া মুই খুবই খুশি হনু বাহে। ঈদত ব্যাটাটাক নিয়্যা খাবার পাইম।’
পাশে যাঁরা: আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকাসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্ট ৬ জুলাই পর্যন্ত ৩১ লাখ ৬ হাজার ১১৭ টাকা অনুদান গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে সিলেটের সাতটি, সুনামগঞ্জের চারটি, নেত্রকোনার চারটি উপজেলা ও কুড়িগ্রামের পাঁচটি ইউনিয়নের পাঁচটি চরে বন্যার্ত মানুষদের মধ্যে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। ব্যাংক হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপের ডোনেশনের মাধ্যমেও আপনার সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।
মন্তব্য করুনঃ