মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় আজ বুধবার (৩০ আগস্ট) থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন।
দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির খনির ভূগর্ভের ১১১৩ কোল ফেজের (কয়লা উত্তোলন বা নির্গমন মুখ) মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন ফেজে যন্ত্রপাতি স্থানান্তরে আগামী দুই মাস এ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মাইন অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) খান মো. জাফর সাদিক।
জাফর সাদিক বলেন, খনির ১১১৩ ফেসের কয়লার মজুত শেষ হওয়ায় এবং নতুন ফেস ১৪১২ চালু করার জন্য যন্ত্রপাতি স্থানান্তর করার জন্য বুধবার থেকে কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ১৪১২ ফেসে নতুন করে ওপেন আব কাট নির্মাণ, ১১১৩ ফেস থেকে সকল ইকুইপমেন্ট স্যালভেজ ও যথাযথ মেইনটেন্যান্স করে ১৪১২ ফেসে স্থাপন কাজ করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবরের শেষ নাগাদ নতুন ফেস থেকে আবারও উৎপাদন চালু করা সম্ভব হবে। আশা করছি, ১২১৪ নতুন ফেস থেকে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিকটন কয়লা পাওয়া যাবে।
এছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিটটি চালু আছে। যা থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ থেকে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।
ইউনিট চালু রাখতে প্রতিদিন ২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ইয়ার্ড ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইয়ার্ডে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুত রয়েছে। যা দিয়ে প্রায় দুই মাস তাপবিদ্যুতের এই ইউনিটটি সচল রাখা সম্ভব।
তিনি বলেন, তাপবিদ্যুতের তিনটি ইউনিটের মধ্যে ওভার হোলিং-এর কারণে দুই নং ইউনিটটি বন্ধ হয়ে আছে এবং কয়লা স্বল্পতার কারণে ২০১৯ সাল থেকে এক নম্বর ইউনিটটিও বন্ধ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রংপুর বিভাগে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে মাত্র ১৮০ থেকে ২২০ মেগাওয়াট উৎপন্ন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তিনটি ইউনিট চালু রাখতে গেলে প্রতিদিন ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিকটন কয়লার প্রয়োজন।
খনি সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন ফেজে যন্ত্রপাতি স্থানান্তর ও চালু করতে প্রায় দুই মাস সময় লেগে যাবে। স্থানান্তর কাজ শেষে নতুন ফেজের উৎপাদন আগামী অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হতে পারে। ধারণা করছে, নতুন ফেজ থেকে প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার মেট্রিকটন কয়লা পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ১১১৩ ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। ওই ফেস থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের পর উৎপাদিত কয়লা বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়।
সূত্রমতে, বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিসিএমসিএল-এর ইয়ার্ডে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুত আছে। যা দিয়ে প্রায় দুই মাস তাপবিদ্যুৎ সচল রাখা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুনঃ